নেত্রকোনা প্রতিনিধি
একটা সূঁচ আর একটুখানি সূতা—এতটুকু দিয়েই বদলে যাচ্ছে নারীদের জীবন। নেত্রকোনা পৌর শহরের ইসলামপুর এলাকার একটি ছোট ঘরে শুরু হওয়া “স্বপ্নবুনন সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” এখন হয়ে উঠেছে শত শত নারীর স্বপ্ন পূরণের আশ্রয়। এর উদ্যোক্তা তাহমিদা ইসলাম বর্তমানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অস্থায়ী প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।
২০০৪ সালে মাত্র তিনজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেন তাহমিদা ইসলাম। সমাজে গুরুত্বহীন কাজ হিসেবে দেখা হলেও তিনি হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, যেখানে শিখানো হয় শুধু কাপড় সেলাই নয়—নারীদের আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরতা ও সম্মান অর্জনের পথ।
এ পর্যন্ত ৭০০–৮০০ জন নারী এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কেউ খুলেছেন টেইলারিং শপ, কেউ ঘরে বসেই নিচ্ছেন অর্ডার, আবার কেউ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশের বাইরেও পোশাক বিক্রি করছেন। অনেকেই আজ পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী।
শহরের বাইরেও কাজ করেছেন তিনি। নেত্রকোনার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে বিধবা, স্বামী-পরিত্যক্তা ও দরিদ্র নারীদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন ব্লাউজ, পেটিকোট, থ্রিপিস ও শিশুদের পোশাক তৈরির কৌশল। পাশাপাশি শিখিয়েছেন বাজার ধরার উপায় ও আয়ের পথ তৈরি করার কৌশল।
তাহমিদা ইসলাম বলেন, “আগে মানুষ বলত সেলাই শিখে কী হবে? এখন তারাই এসে প্রশংসা করে।”
বর্তমানে প্রতিদিন ৫০–৬০ জন নারী প্রশিক্ষণ নিতে আসেন “স্বপ্নবুনন”-এ। তাঁদের চোখে ভেসে ওঠে সংসারের দায়-দায়িত্ব, আবার কারও মনে থাকে নতুন জীবনের স্বপ্ন।
তাহমিদা ইসলাম চান, এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক জেলার প্রতিটি উপজেলায়, এমনকি সারাদেশে। এজন্য তিনি সরকারি সহযোগিতা ও নীতিনির্ধারকদের সুনজর কামনা করেন।
হাতে সূঁচ-সূতা, মনে সাহস আর নারীদের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন সত্যিকারের এক স্বপ্ন বোনার কারিগর।