দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৫৯ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। সেনাবাহিনী গত চার সপ্তাহে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে এবং এ সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৮১৩ জন। অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। আজ ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স মেস এ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। পরে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত চার সপ্তাহে ৩৭টি অবৈধ অস্ত্র ও ১৭৯ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি, গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ১১৯টি হারানো অস্ত্রের মধ্যে ৯ হাজার ৭২৯টি এবং ৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৫ রাউন্ড হারানো গোলাবারুদের মধ্যে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, ডাকাত ও অন্যান্য অপরাধী। অভিযানে, ১৪ জুলাই কলাবাগান থেকে সন্ত্রাসী ইয়ামিন সিদ্দিকী নিসাতকে একটি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। ১৯ জুলাই রূপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ সাতজন গ্রেফতার এবং অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
মাদকবিরোধী অভিযানে রামপুরা, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, ভাষানটেক, ফরিদপুর ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৫৫ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৫৭৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চোরাচালান দমন অভিযানে সুনামগঞ্জে ১ কোটি ১২ লাখ টাকার ওষুধ উদ্ধার এবং সিলেটে অবৈধ প্রসাধনী, পোশাক ও কফি জব্দ করা হয়েছে। বিআরটিএ’র ঢাকা ও পূর্বাচল কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ৪ জন দালালকে আটক করা হয়েছে, যারা ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরিতে অবৈধ সহযোগিতা করত।
ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘তাকদীর ফুড বেভারীজ’ ও ‘রয়াল স্লাইস’ রেস্টুরেন্টকে জরিমানা ও সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। অবৈধভাবে নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন প্রতিরোধে সুনামগঞ্জ ও সিলেট থেকে ৩৪টি নৌকা, ৭টি বাল্কহেড, ৫টি ড্রেজার, ১টি পিকআপ ও ৬০ হাজার ৫০০ সিএফটি বালু উদ্ধার করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ৯৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ১৬ জুলাই ঢাকার দারুস সালাম এলাকায় হত্যাচেষ্টার সময় এক দুষ্কৃতিকারীকে আটক করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরে মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধ করে দুইটি খুনের আসামিকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
১১ জুলাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-নেপাল রুটে বোমা আতঙ্ক ছড়ানো দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৪ জুলাই ফরিদপুরের মধুখালীতে বিকাশ প্রতারণা ও অনলাইন জুয়ার মূল হোতা কামরুল মিয়া ও সহযোগীদের আটক করে প্রচুর মোবাইল সিম ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
২৬ জুন জমি বিরোধের ঘটনায় দুই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো ঘটনায় অভিযুক্ত ছয়জনকে আটক করে সেনাবাহিনী এবং আহতদের বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে।
জুলাই মাসে অভ্যুত্থানে আহত ৪ হাজার ৮৮৯ জনকে দেশের বিভিন্ন সামরিক চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ৫ জুলাই উল্টো রথযাত্রার সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে সেনাবাহিনী। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও তারা নিয়োজিত রয়েছে।
২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনী উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রমে দ্রুত ও পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে। আহত ৪১ জনের মধ্যে ১১ জন বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উদ্ধারকালে ২৯ সেনা সদস্য আহত হন, যাদের মধ্যে একজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
২২ জুলাই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে সচিবালয়ে প্রবেশের সময় সেনা সদস্যদের ওপর হামলায় ৫ জন সেনা সদস্য আহত হয়। তাদের সচিবালয়ের ভেতরের ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩ থেকে ৩১ জুলাই সময়কালে পরিচালিত অভিযানে বিপুল অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার এবং সাতজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাঘাইহাট ও বান্দরবানে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ধ্বংস ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় পরিচালিত অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ক্রিস্টাল আইস, গাঁজা, সিগারেটসহ অবৈধ পণ্য ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল। সেই ব্যক্তিদের জীবন বাঁচানোর জন্যই সেনাবাহিনী সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং জনসাধারণের নিরাপত্তায় অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।