রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশসহ দেশের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। নাশকতা বা সহিংসতা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আগামীকাল ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায়কে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ‘শাটডাউন’ ডাকেও ঢাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা
রায়ের আগে দুই দিনের ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। আজ ছিল কর্মসূচির প্রথম দিন। তবে শহরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। অফিস-আদালত, মার্কেট, যান চলাচল ও জনজীবন স্বাভাবিক ছিল।
এর মধ্যেই রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক দিনে অগ্নিসন্ত্রাসীরা একাধিক বাসে আগুন দিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার পর থেকেই পুলিশ বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে।
“রায় অবশ্যই ঘোষণা হবে”—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
শনিবার দুপুরে পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আগামীকাল নির্ধারিত সময়েই ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, “যে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান দায়িত্ব।”
উপদেষ্টা মনে করিয়ে দেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা এ মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন। তাই রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো উসকানি বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীতে ডিএমপির বিশেষ ব্যবস্থা
ডিএমপি মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে পর্যাপ্ত পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, “কোনো দল বা গোষ্ঠী জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক।”
ডিএমপি জানিয়েছে—
• গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে
• প্রধান সড়কে মোবাইল টহল বাড়ানো হয়েছে
• সাদাপোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে
• সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ম্যাপিং করে সেখানে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে
জেলা থেকে ঢাকায় আসা নিয়ন্ত্রণে কড়া নজরদারি
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেন জেলা থেকে ঢাকায় এসে বড় ধরনের জমায়েত করতে না পারে—সেজন্য সব থানাকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া—
• রেলপথে কড়া নজরদারি
• লঞ্চ ও ফেরিঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ
• আন্তঃজেলা পরিবহনে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি
পাশাপাশি পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখা হয়েছে যাতে হঠাৎ কোনো সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
রাজধানীতে টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো
রোববার দিনব্যাপী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো ছিল। মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, মতিঝিল, গুলিস্তান, মিরপুর, উত্তরা ও খিলক্ষেত এলাকায় নিয়মিত টহল, গাড়ি তল্লাশি এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও আইনানুগ পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশ পেয়েছে।
জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারণ মানুষকে গুজব বা উসকানিমূলক প্রচারণা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো উত্তেজনাকর বা ভিত্তিহীন তথ্য যাচাই না করে শেয়ার না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited