জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি বা শঙ্কার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি জানিয়েছেন, সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের লিগ্যাল এইড অফিস পরিদর্শন শেষে বিচারকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ড. আসিফ। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন প্রস্তুতি এবং বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে কথা বলেন।
ড. আসিফ বলেন, “জাতীয় নির্বাচনে বিলম্বের কোনো কারণ নেই। নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে। সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছি।”
তিনি উল্লেখ করেন, দীর্ঘ প্রায় ১৬–১৭ বছর দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই সময়ে প্রায় পাঁচ কোটি নতুন ভোটার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। এবার তারা প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে মুখিয়ে আছেন।
“মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে অসাধারণ উৎসাহ তৈরি হয়েছে। প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে শহর—সব জায়গায় মানুষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তারা অধীর আগ্রহে ভোটের দিনের অপেক্ষায় আছে,” বলেন ড. আসিফ।
আদালত ব্যবস্থায় গতি আনতে পদক্ষেপ
নির্বাচন প্রসঙ্গের পাশাপাশি আদালতের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। লিগ্যাল এইড অফিস পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, আদালতের বিচারক সংকট কাটাতে ও মামলার জট হ্রাস করতে নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
“আগে যেখানে একজন বিচারক দায়িত্ব পালন করতেন, এখন সেখানে তিনজন বিচারক কাজ করবেন। এতে মামলার চাপ অনেকটাই কমবে, বিচারপ্রার্থী জনগণ দ্রুত সেবা পাবেন,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বিচার বিভাগের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা বিস্তার এবং অধস্তন আদালতগুলোতে দক্ষ মানবসম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে সরকার ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে।
“আদালত সংস্কারে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। এর সুফল জনগণ অবশ্যই পাবে। বিচারপ্রাপ্তি সহজ করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এসব উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” মন্তব্য করেন তিনি।
জনগণের আস্থা ফেরাতে গুরুত্ব
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। “নির্বাচন হবে মুক্ত, স্বচ্ছ ও অবাধ। সহিংসতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর সতর্ক অবস্থানে থাকবে। প্রতিটি ভোটার যেন নিরাপদ পরিবেশে ভোট দিতে পারে—এটাই আমাদের প্রধান অঙ্গীকার।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে কি না, তা সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি জোরদার করা হবে, তবে আইনগত সীমার মধ্যেই।
পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন অনেকে
পরিদর্শনকালে রাজশাহী আদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর (এপি) এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বিচারকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের সময় আদালতের সেবা আরও জনবান্ধব করার উপায়, লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং বিচারাধীন মামলার গতি বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
ড. আসিফ নজরুল মনে করেন, নির্বাচন এবং বিচার বিভাগ—উভয় ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গিই হবে সামনের দিনগুলিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। “সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গতিশীল বিচারব্যবস্থা—এই দুই ক্ষেত্রের সফলতাই জনগণের আস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে,” বলেন তিনি।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited