নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ তিনটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এর মাধ্যমে দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হলো।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে অন্য দুটি দল হলো— বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ‘শাপলা কলি’, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলকে (মার্ক্সবাদী) ‘কাঁচি’ এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে ‘হ্যান্ডশেক’ প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তির বিস্তারিত:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,
সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ঠিকানা: রূপায়ণ ট্রেড সেন্টার (২য় তলা), ১১৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, বাংলামোটর, ঢাকা-১২০৫— রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন।
তাদের প্রার্থিত প্রতীক হলো ‘শাপলা কলি’।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে প্রয়োজনীয় দলিলাদিসহ কারণ উল্লেখপূর্বক আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
একইভাবে, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি-র ক্ষেত্রেও পৃথক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইসি সচিবের বক্তব্য:
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন,
“কমিশন মনে করেছে, এই তিনটি দল রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তাদের বিষয়ে আগামীকাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। দাবি-আপত্তির সময়সীমা ১২ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত তথ্য ও আপত্তি পর্যালোচনা করে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর দলগুলোর নিবন্ধনের সনদ প্রদান করা হবে।
পটভূমি ও প্রক্রিয়া:
ইসি সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোট ১৪৩টি দল আবেদন করে। এর মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ২২টি দলের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তদন্ত পাঠানো হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন বিশ্লেষণ করে দেখে যে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধনের জন্য দলের গঠন, সদস্যসংখ্যা, সাংগঠনিক কাঠামো, অফিস, সংবিধান এবং বিভিন্ন জেলার কার্যক্রম বিবেচনায় নেওয়া হয়। মাঠপর্যায়ের যাচাই শেষে কমিশনের বৈঠকে চূড়ান্তভাবে এই তিনটি দলকে গণবিজ্ঞপ্তি জারির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক তাৎপর্য ও পরবর্তী ধাপ:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন তিনটি দল নিবন্ধিত হলে বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা আরও বাড়বে, যা রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে পারে।
তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করেন, দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার মাধ্যমে সংগঠনভিত্তিক রাজনীতির জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়বে। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে তারা আইনানুগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর যদি কোনো অনিয়ম বা অযোগ্যতা পাওয়া না যায়, তবে এই তিনটি দলকে শিগগিরই নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হবে, যা তাদের জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় একটি আইনি স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে।
নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটি অংশগ্রহণমূলক নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন। এখন কমিশনের হাতে রয়েছে দাবি-আপত্তি যাচাইয়ের দায়িত্ব।
সেই প্রক্রিয়া শেষে, রাজনৈতিক মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হতে পারে আরও তিনটি নতুন দল—
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited