সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হয়, সে লক্ষ্যেই সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১০টায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় অবস্থিত কোডেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত “নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে নিরূপণ ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। নির্বাচনী পরিবেশ যাতে শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল থাকে, সে বিষয়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান নির্বাচন আইন বা আরপিও (Representation of the People Order) সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে এখন রিটার্নিং কর্মকর্তারা চাইলে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত করার ক্ষমতা রাখবেন। এতে করে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।”
তিনি মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন নির্ভয়ে ও সততার সঙ্গে। নির্বাচন জনগণের অধিকার, তাই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারব।”
নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকারের লক্ষ্য একটি ‘ইনক্লুসিভ ইলেকশন’—যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে, ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে এবং ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থাকবে না। এজন্যই কমিশন প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কাজ করছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা চাই নির্বাচনকে প্রশাসনিক প্রভাব বা বাহ্যিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে যেন কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না হয়।”
কর্মশালায় অংশগ্রহণ ও আলোচনা
কুয়াকাটা কোডেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালার আয়োজন করে পটুয়াখালী জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিস। এতে জেলার আট উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার, এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-প্রধান মুহাম্মদ মোস্তফা হাসান।
সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়া কেবল একটি দিনের আয়োজন নয়, এটি একটি দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা ছাড়া কোনো নির্বাচন সফল হতে পারে না।”
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “কুয়াকাটার মতো সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনে লজিস্টিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন একসঙ্গে কাজ করে প্রতিটি কেন্দ্র নিরাপদ রাখবে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার জানান, “নির্বাচনের সময় ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে। যাতে কোনো প্রার্থী বা কর্মী ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কমিশনের বার্তা
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম তার বক্তব্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “কমিশন ভোটগ্রহণের দিনকে উৎসবমুখর করে তুলতে চায়। এজন্য ভোটারদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা, ডিজিটাল ভোটার তালিকা ও ইলেকট্রনিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি এমন নির্বাচন, যেখানে দেশবাসী বিশ্বাস করবে যে ফলাফল সত্যিকারের ভোটের প্রতিফলন।”
অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের হাতে প্রশিক্ষণ সনদ তুলে দেন প্রধান অতিথি ইসি আনোয়ারুল ইসলাম। কর্মশালায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া, আইন, ভোটগ্রহণ কৌশল, নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সমন্বয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited