রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক অনুপ্রেরণামূলক আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় নমনীয়তা, সময়োপযোগী সমন্বয় এবং নাগরিক দায়িত্ববোধের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫-এ বিজয়ী দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং নিজেদের উপস্থাপিত নীতি প্রস্তাবনা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। প্রফেসর ইউনূস তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,
“তোমাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই এই বিজয়ের জন্য। এটি শুধু প্রতিযোগিতার সাফল্য নয়, ভবিষ্যতের নেতৃত্বের অনুশীলন।”
তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতা এক ধরনের মিনি ক্যাবিনেট, যেখানে শিক্ষার্থীরা কাল্পনিক পরিস্থিতি তৈরি করে বিতর্ক ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুশীলন করেছে। “ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতাই তোমাদের কাজে লাগবে, কারণ একদিন তোমরাই আসল ক্যাবিনেট রুমে বসে দেশের নীতি নির্ধারণ করবে— সেটা সরকারি, ব্যবসায়িক কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়েই হোক,” বলেন তিনি।
‘ভুল নীতি বড় ক্ষতির কারণ’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নীতি যতই সুন্দরভাবে লেখা হোক, যদি তার দিকনির্দেশনা ভুল হয়, তবে ফলাফল ব্যর্থ হতে বাধ্য।
“সুন্দর প্রস্তাব, বড় বাজেট বা লোকবল থাকলেও ভুল নীতির কারণে সবকিছু মাঠে মারা যায়। নীতি যদি সঠিক হয়, তাহলে ফলও আসে সঠিকভাবে,” তিনি মন্তব্য করেন।
তার মতে, নীতিনির্ধারকদের কাজ শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়, বরং সিদ্ধান্তের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব গভীরভাবে বোঝা। “একজন চিকিৎসক যেমন রোগীর অবস্থা বুঝে প্রেসক্রিপশন দেন, তেমনি নীতিনির্ধারককেও পুরো প্রেক্ষাপট বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়,” বলেন প্রফেসর ইউনূস।
তিনি সতর্ক করে বলেন, অনেক সময় নীতিগত দুর্বলতা বা অনমনীয়তার কারণেই বড় পরিকল্পনাগুলোও ব্যর্থ হয়। “কখনো নীতি একেবারে ব্যর্থ হয়, কখনো দুর্বল হয়ে পড়ে—ফলে প্রত্যাশিত ফল আসে না। নীতি শুধু সরকারের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।”
‘দুনিয়া বদলালে নীতিও বদলাতে হবে’
পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে নীতির অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
“দুনিয়া বদলে গেলেও যদি আমরা পুরনো নীতিতে আটকে থাকি, তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না। সময়, উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে নীতিরও পরিবর্তন জরুরি।”
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, নীতি প্রণয়নের মূল চ্যালেঞ্জ হলো বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা। নীতি স্থির নয়—বরং পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেটিকে উন্নত করতে হয়। “তোমাদের এই অনুশীলন ভবিষ্যতের জন্য এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে,” যোগ করেন তিনি।
‘নাগরিক মানে মালিক’
আলোচনার এক পর্যায়ে প্রফেসর ইউনূস নাগরিক দায়িত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন,
“নাগরিক মানে মালিক। মালিক হিসেবে আমাদের হক আছে জানতে—যে নীতি হচ্ছে তা সঠিক কিনা। যদি ভুল পথে যায়, তাহলে সোচ্চার হতে হবে।”
তিনি বলেন, যদি নাগরিকরা চুপ থাকে, তাহলে কোনো ব্যবস্থাই সঠিকভাবে চলবে না। “তোমরা ভবিষ্যতের নাগরিক, ভবিষ্যতের নেতা। তাই এখন থেকেই প্রশ্ন করতে শেখো, যাচাই করতে শেখো—নীতিটা সত্যিই দেশের জন্য ভালো কিনা।”
শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,
“চিন্তা করো—নীতি শুধু সরকারের বিষয় নয়, তোমার নিজের জীবনেও নীতি প্রযোজ্য। নাগরিক হিসেবে এটা তোমার দায়িত্ব যে দেশের নীতি কতটা সঠিক পথে যাচ্ছে তা দেখবে, বুঝবে এবং প্রয়োজনে মত দেবে।”

 
			 
			
 










 সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited
সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited