আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে।
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের “হল অব প্রাইড”-এ অনুষ্ঠিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
“সংসদ নির্বাচন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ”
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “আসন্ন সংসদ নির্বাচন পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী—এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অতীতে পুলিশের বিরুদ্ধে জনমনে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার একটি বড় সুযোগ এবার সামনে এসেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা
সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মো. গোলাম রসুল, অতিরিক্ত আইজিগণ, এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান কর্মকর্তারা।
এছাড়া সকল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নিজ নিজ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রস্তুতি তুলে ধরেন।
অপরাধ চিত্র ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ওপর জোর
সভায় অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম দেশের সামগ্রিক অপরাধ পরিস্থিতির পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, নির্বাচনের আগে ও চলাকালীন সময় নিরাপত্তা জোরদারে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুতি আরও বাড়ানো হয়েছে।
আইজিপি বলেন, “গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে আরও মনোযোগ দিতে হবে। নির্বাচনের সময় কোনো ধরনের অস্ত্র বা সহিংসতা যেন সংঘটিত না হয়, সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।”
তিনি লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, “অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে আরও কার্যকর করতে হবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত পুরস্কার সম্পর্কিত প্রচারণা বাড়াতে হবে।”
প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক দায়িত্বে কঠোরতা
আইজিপি চলমান নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে গতি আনতে ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের মনোবল, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রশিক্ষণ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, তা বাস্তবে কাজে লাগাতে হবে।”
জেলা পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, “জনগণের আস্থা ধরে রাখতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যথাসময়ে প্রদানের বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।”
গুম, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও মামলার তদন্তে নির্দেশ
আইজিপি বলেন, “গুম কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে যদি মামলা রুজু হয়, তবে সেগুলোর তদন্ত দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত ও নিষ্পত্তি করতে হবে।”
তিনি মামলার তদন্তের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং অপরাধ দমনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
মাঠপর্যায়ে মনোবল বৃদ্ধি ও আস্থা ফেরানোর আহ্বান
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে মনে রাখতে হবে—আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। তাই জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, নিরপেক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতা বজায় রাখাই আমাদের মূল শক্তি।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী নির্বাচন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, পুলিশ বাহিনী এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।”
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা প্রশাসনিক, অপারেশনাল ও মাঠপর্যায়ের নানা বাস্তব সমস্যা তুলে ধরেন এবং আইজিপির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited