বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী কোর। এই কোরের ইঞ্জিনিয়াররা দেশ ও দেশের বাইরে সেতু, রাস্তাঘাটসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।”
রোববার সকালে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় কাদিরাবাদ সেনানিবাসে অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিএসএমই)-এ কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৯ম কর্নেল কমান্ড্যান্ট অভিষেক অনুষ্ঠান ও বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।
“বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ সেনাবাহিনীর গর্ব”
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সদস্যদের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, “আমাদের স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগ জাতির ইতিহাসে অনন্য। কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সেনানীরা যুদ্ধের সময় যেমন সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। আমরা এই কোরের জন্য গর্বিত।”
তিনি আরও বলেন, “সততা, সত্যনিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধে অবিচল থেকে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স দেশগঠনে যে ভূমিকা রাখছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও তাদের এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।”
জাতীয় উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা
সেনাবাহিনী প্রধান তাঁর ভাষণে বলেন, দেশের সড়ক, সেতু, প্রতিরক্ষা স্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন—সব ক্ষেত্রেই কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সদস্যরা অদম্য মনোবল নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, বেসামরিক উন্নয়ন প্রকল্পেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাদের দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।”
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আশাবাদ ব্যক্ত করেন, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই কোর ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্মের অফিসার ও সৈনিকরা আধুনিক জ্ঞান, নেতৃত্ব ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করবে।”
কোরের নবম কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে অভিষিক্ত সেনাপ্রধান
অনুষ্ঠানের শুরুতে সেনাবাহিনী প্রধান ইসিএসএমই প্রাঙ্গণে পৌঁছালে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান জিওসি, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড; সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ; এবং কমান্ড্যান্ট, ইসিএসএমই। পরে তাঁকে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৯ম কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়।
অভিষেকের সময় কোরের পতাকা উত্তোলন, গার্ড অব অনার ও সালাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। সেনাপ্রধান এ সময় কোরের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “এই কোরের ঐতিহ্য ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
অধিনায়ক সম্মেলনে পেশাগত আলোচনা
বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলনে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের বিভিন্ন ইউনিট ও ফর্মেশনের কমান্ডাররা অংশ নেন। সম্মেলনে পেশাগত উৎকর্ষ, আধুনিক প্রশিক্ষণ, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রকৌশল দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জিওসি, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড; মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস; চিফ কনসালটেন্ট জেনারেল, অ্যাডহক কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট; ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ; অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল; জিওসি ১১ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, বগুড়া এরিয়া; সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা; কমান্ড্যান্ট, ইসিএসএমই; বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের কমান্ডারবৃন্দ; ইউনিট অধিনায়কবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।
শেষ বক্তব্যে সেনাপ্রধানের বার্তা
অনুষ্ঠান শেষে সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করে বলেন, “আমাদের প্রতিটি সদস্যের পেশাদারিত্ব ও সততার ওপরই নির্ভর করছে দেশের উন্নয়নযাত্রা। আমি বিশ্বাস করি, কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স ভবিষ্যতেও দেশের উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় নিজেদের অগ্রণী ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited