রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকায় বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন পথচারীর মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি নিহতের পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যকে মেট্রোরেলে চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান। উপদেষ্টা বলেন, “দুঃখজনক এ দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁর পরিবারের কর্মক্ষম কাউকে মেট্রোরেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।”
দুর্ঘটনা নাশকতা নাকি প্রযুক্তিগত ত্রুটি, তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফকে। কমিটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা জানতে চাই, পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাডটি কীভাবে খুলে পড়ল। এটি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি, অবহেলা নাকি নাশকতা— সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।”
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে বিকেলে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু করা হয়েছে।
নিহতের পরিবারে শোক, সহমর্মিতায় এগিয়ে এলো প্রশাসন
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির নাম আবুল কালাম (৪৫)। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। বিকেল তিনটার কিছু পর উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আবুল কালামের মরদেহ দেখতে যান এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, “আমরা নিহতের পরিবারের পাশে আছি। সরকার তাদের সহযোগিতায় সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। এ দুর্ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সেই লক্ষ্যেই দ্রুত তদন্ত ও মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।”
আংশিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু, পুনরায় চালুর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলেও, বিকেলে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। উপদেষ্টা বলেন, “বাকি অংশ চালু হতে কিছুটা সময় লাগবে। ক্রেন এনে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করতে হবে এবং সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ট্রেন পুনরায় চালু করা হবে।”
মেট্রোরেলের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ চিহ্নিত করেন এবং আশপাশের এলাকাকে নিরাপদ ঘোষণা করেন।
‘জননিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’— রেল উপদেষ্টা
ঘটনার পর নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিলেও, রেল উপদেষ্টা জানিয়েছেন যে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রী ও পথচারীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই প্রকল্পের সব অংশে প্রযুক্তিগত পর্যালোচনা শুরু করেছি। প্রতিটি সংযোগ ও যন্ত্রাংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ ট্রেন চলাচল চালু করা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “মেট্রোরেল বাংলাদেশের আধুনিক নগর পরিবহনের প্রতীক। একটি দুর্ঘটনা এই প্রকল্পের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করুক, আমরা তা চাই না। তাই প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।”
রাজধানীর প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে এ ধরনের দুর্ঘটনা বিরল হলেও, এটি নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার প্রতি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তবে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতামূলক উদ্যোগে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায় নির্ধারণের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited