আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, সরকারের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই এবং সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বিষয়ে ইতিমধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার মাগুরার নবভঙ্গা পার্কে জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে’
শফিকুল আলম বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই। সব রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং নির্বাচনকে ঘিরে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এই নির্বাচন হবে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের এক ঐতিহাসিক সুযোগ। এটি গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করবে।”
জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন হবে আনুষ্ঠানিকভাবে
প্রেস সচিব জানান, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে নির্মিত ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলন আমাদের জাতীয় জাগরণের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। এই স্মৃতিস্তম্ভ সেই আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে চিরস্থায়ী বার্তা বহন করবে।”
গণভোট নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি
গণভোট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের আগে বা পরে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এ বিষয়ে সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তিনি বলেন, “গণভোটের ধারণা এসেছে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। জনগণ চাইলে তাদের মতামত যাচাইয়ের সুযোগ তৈরি করা হবে।”
জুলাই সনদে জাতীয় ঐক্য
জুলাই সনদ বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, “জুলাই সনদ নিয়ে সব দলই মূলত ঐকমত্যে পৌঁছেছে। যারা এখনো স্বাক্ষর করেনি, তারাও নীতিগতভাবে এতে সম্মতি দিয়েছে। সনদে জনগণের অধিকার, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মূলনীতি তুলে ধরা হয়েছে।”
তিনি জানান, জুলাই সনদ দেশের ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো ও রাজনৈতিক আচরণের জন্য একটি নৈতিক নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।
‘না ভোট’ থাকবে আরপিও সংশোধনীতে
জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী সম্পর্কেও বিস্তারিত জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, “এই সংশোধনীতে ‘না ভোট’ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো নির্বাচনী এলাকায় যদি একজন প্রার্থীও থাকে, জনগণ চাইলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাকে ‘না ভোট’ দিয়ে প্রত্যাখ্যানের সুযোগ পাবে।”
তিনি মনে করেন, এই বিধান জনগণের ভোটাধিকারের স্বাধীনতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং নির্বাচনে প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অবস্থান
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, “দলটির জন্য আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিলেও ইঙ্গিত দেন যে, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়।
গণতন্ত্রের পথে নতুন সূচনা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের এই বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের আত্মবিশ্বাস ও নির্বাচনী প্রস্তুতির অগ্রগতি তুলে ধরছে। জুলাই সনদ, আরপিও সংশোধন ও গণভোট—এই তিনটি উদ্যোগ একসঙ্গে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করছে।
তাঁদের মতে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা হবে দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited