রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক সংলাপ অব্যাহত রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই আজ বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক—একটি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে এবং অপরটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে।
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মেদ বাসসকে জানিয়েছেন, বিকেল সোয়া ৫টায় এনসিপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। দুই বৈঠকেই উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক পরিষদের সদস্যরা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।
সংলাপের মূল আলোচ্য বিষয়: নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো
সূত্র জানিয়েছে, আজকের সংলাপে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা, নির্বাচনী কমিশনের স্বাধীনতা ও ভোটার আস্থার বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসবে—কীভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা যায় এবং নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনার পর আজ নতুন দুই দলের বৈঠক
এর আগে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেখানে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনিক তদারকি নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়। আজকের সংলাপে এনসিপি ও জামায়াতও তাদের নিজস্ব প্রস্তাব ও অবস্থান তুলে ধরবে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গতকালের বিএনপি বৈঠকের পর আজকের সংলাপ দুই দলের অবস্থান স্পষ্ট করবে—কে কতটা সমঝোতার পথে যেতে প্রস্তুত, তা এখানেই বোঝা যাবে।
প্রধান উপদেষ্টার লক্ষ্য: সমঝোতার পথ খোলা রাখা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুরু থেকেই জোর দিচ্ছেন সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধানের ওপর। তিনি মনে করেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া যেন একতরফা বা বর্জিত না হয়—এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলা এখন সবচেয়ে জরুরি। এজন্য তিনি বড় দল থেকে শুরু করে ছোট দল, নিবন্ধিত-বহির্ভূত সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গেই ধারাবাহিক সংলাপ করছেন।
তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ইউনূস চাইছেন—সব দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হোক, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে পরবর্তীতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে প্রত্যাশা
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সংলাপ প্রক্রিয়া নিয়ে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল মনে করছে, সংলাপ সফল হলে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিভাজন কমতে পারে এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে।
অন্যদিকে কিছু দল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সংলাপ যদি কেবল আনুষ্ঠানিকতা হয়, তবে ফলাফল নিরপেক্ষ ভোটের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। তবে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে প্রতিটি দলের বক্তব্য শোনা এবং লিখিত প্রস্তাব গ্রহণ—এই দু’টি বিষয়কে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আগামী বৈঠকগুলোর প্রস্তুতি
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে বৈঠক।
সব দলের প্রস্তাব একত্র করে একটি “সংলাপের সারসংক্ষেপ” প্রণয়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা পরে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে পাঠানো হবে।
রাজনীতিতে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার এই সংলাপ উদ্যোগ ইতিমধ্যেই একটি ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। আজকের এনসিপি ও জামায়াতের বৈঠক থেকে কী ধরনের প্রস্তাব আসে, তা এখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
দেশবাসীর প্রত্যাশা—সংলাপের এই ধারাবাহিকতা যেন রাজনৈতিক সমঝোতার নতুন অধ্যায় উন্মোচন করে এবং একটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করে।
