আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের— এমনটাই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে আমাদের কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। সরকারের সব সংস্থা প্রস্তুত রয়েছে, এবং আমরা নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই।”
সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।
‘গণমাধ্যমের সহযোগিতা অপরিহার্য’
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচন একটি জাতীয় কার্যক্রম। এর সুষ্ঠু ও সফল আয়োজনের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই সাংবাদিকরা দায়িত্বশীলভাবে প্রতিবেদন করবেন, যাতে জনগণ সঠিক তথ্য পায়।”
তিনি আরও জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্ব, সহনশীলতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বডিওর্ন ক্যামেরা কেনায় ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প
নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে বডিওর্ন ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বডিওর্ন ক্যামেরা কেনা হবে। এ প্রকল্পের জন্য সরকার ইতিমধ্যে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ হবে এবং মাঠপর্যায়ের ঘটনাগুলো রিয়েল টাইমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।”
পূর্ববর্তী নির্বাচন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা এবার থাকবেন না
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের এবার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে। আমরা নতুন টিম, নতুন প্রশিক্ষিত সদস্যদের দায়িত্ব দিতে চাই— যাতে আগের কোনো বিতর্ক না থাকে।”
তিনি আরও জানান, প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা হয়েছে এবং কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বা সহিংসতা সহ্য করা হবে না।
অগ্নিকাণ্ড তদন্তে একাধিক কমিটি
সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া বড় বড় আগুনের ঘটনায় নাশকতার সম্ভাবনা আছে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন,
“এসব ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই বলা যাবে এসব দুর্ঘটনার পেছনে কোনো অপরাধমূলক তৎপরতা ছিল কিনা।”
তিনি আরও বলেন, “আগুন লাগার ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কোনো ধরনের নাশকতা বা অবহেলাকে ছাড় দেব না।”
বিদেশে ই-পাসপোর্ট সেবা ডিসেম্বরেই
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর দেন। তিনি জানান,
“আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা হবে। এর ফলে প্রবাসীরা দূতাবাস থেকেই দ্রুত পাসপোর্ট নবায়ন ও অন্যান্য সেবা নিতে পারবেন।”
এছাড়া প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট ফি কমানোর বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে বলে জানান তিনি।
“প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির রক্তস্রোত। তাদের জন্য পাসপোর্ট ও বিমানবন্দর সেবা আরও সহজ করতে আমরা কাজ করছি,” বলেন উপদেষ্টা।
নিরাপত্তা ও উন্নয়ন— দুই দিকেই সরকারের মনোযোগ
ব্রিফিংয়ের শেষ দিকে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও জনসেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের নজর রয়েছে। আমরা চাই জনগণ নিশ্চিন্তে ভোট দিক, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকুক এবং দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকুক।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে।
