রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের তিন বাহিনী—সেনা, নৌ ও বিমান—এর সদস্যরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে যৌথভাবে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছেন। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কার্গো সেকশনের একটি গুদামঘরে আগুন লাগে বলে জানা গেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক ক্ষুদেবার্তায় জানিয়েছে, আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিমান বাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট, সেনাবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী দল এবং নৌবাহিনীর একটি বিশেষায়িত ফায়ার রেসপন্স টিম। তারা বর্তমানে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে অগ্নি নির্বাপণে কাজ করছে।
ঘটনাস্থলে আতঙ্ক, কার্গো টার্মিনাল আংশিক খালি করা হয়েছে
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলের দিকে হঠাৎ ঘন ধোঁয়া উড়তে দেখা যায় বিমানবন্দরের ৩ নম্বর গেট সংলগ্ন কার্গো এলাকায়। মুহূর্তেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে ওই অংশের কর্মচারী ও শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়। বিমানবন্দরের ফ্লাইট অপারেশন স্বাভাবিক থাকলেও, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকটি ফ্লাইটের ট্যাক্সিং ও লোডিং কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের উপপরিচালক (অপারেশন) আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের জানান, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গুদামের ভেতরে থাকা প্যাকেটজাত পণ্য বা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আগুনের তীব্রতা বেশি ছিল বলে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হয়েছে।”
যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অভিযান চলে। বিমানবাহিনীর বিশেষ ফোম ইউনিট ও সেনাবাহিনীর হেভি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে আগুন ছড়িয়ে পড়া অংশগুলো ঘিরে ফেলা হয়। নৌবাহিনীর সদস্যরা পানির সরবরাহ ও সুরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দেন।
বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, “যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক কার্গো হ্যান্ডলিং এলাকা, তাই নিরাপত্তা প্রটোকল মেনে অগ্নি নির্বাপণ কার্যক্রম চালাতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই।”
বিমান চলাচলে সাময়িক প্রভাব
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুন লাগার সময় কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কার্গো হ্যান্ডলিং বন্ধ রাখা হয়। তবে যাত্রীবাহী ফ্লাইটে বড় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, “আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। ফায়ার সার্ভিসসহ সব বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। যাত্রী বা বিমান কোনো ক্ষতির খবর এখন পর্যন্ত পাইনি।”
তদন্ত কমিটি গঠন
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইলেকট্রনিক বা দাহ্য পণ্যের সংরক্ষণে ত্রুটি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
আইএসপিআরের বার্তা ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
আইএসপিআর জানিয়েছে, দেশের তিন বাহিনীর দ্রুত সাড়া ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। আগুনে কেউ হতাহত হয়নি বলেও জানানো হয়।
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মুহিবুল্লাহ হারুন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, “এই ঘটনার পর বিমানবন্দরের অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
সার্বিক পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক
রাত ৮টার দিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কার্গো টার্মিনালের বিদ্যুৎ সংযোগ নিরাপদভাবে পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও উৎস বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে তদন্ত শেষে।
দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই অগ্নিকাণ্ডে সাময়িকভাবে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হলেও, দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে তা বড় দুর্ঘটনায় রূপ নেয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
