২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এলজিআরডি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হয়ে মামলার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণ তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
এ ঘটনায় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামীম। এছাড়া মামলার আসামী ও তাদের আইনজীবীরাও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন, “আমি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায় এবং পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। ওই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য যোগাযোগ শুরু করে। ডিবি কার্যালয়ে আটক অবস্থায় আমাদের জানানো হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। যদি আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার না করি, তবে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে ডিবি কর্মকর্তা আমাদের জীবন রক্ষা করেছেন।”
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আমি নিজের চোখে দেখি পুলিশ আমাদের আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। আমার সামনে দু’জন নিহত হন, পরে জানতে পারি মোট ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের ব্যবহৃত অস্ত্র ছিল চাইনিজ রাইফেল ও শর্ট গান। সেদিন বেলা দেড়টার দিকে আমরা জানতে পারি যে প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।”
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, চানখারপুল হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও পুলিশ কমান্ড কর্তৃপক্ষ দায়ী।
এর আগে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১৪ জুলাই সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ মোট আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে। মামলায় অভিযোগপত্রে নাম থাকা আসামির মধ্যে চারজন পলাতক, বাকিরা গ্রেফতার। প্রথম চারজন হলো সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। গ্রেফতার চারজন হলেন শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় কর্মী ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।
আসিফ মাহমুদ সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আরও বলেন, “আমরা ন্যায়বিচারের প্রত্যাশী। যেসব ব্যক্তিরা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া উচিত। আমাদের সমাজে এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে প্রয়োজন কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।”
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে প্রসিকিউশন ও আসামী পক্ষের আইনজীবীরা একে অপরকে প্রশ্ন তোলেন। আদালত পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৬ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন। এ মামলার বিচার মানবতাবিরোধী অপরাধ মোকাবেলায় দেশের আইনের কার্যকারিতা ও ন্যায়বিচারের প্রতিফলন হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
এই মামলার সুষ্ঠু বিচার মানবতাবিরোধী অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও নজর এটির দিকে।
