রাজধানী ঢাকা আজ রাজনৈতিকভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধ্যার অপেক্ষায়। আগামী ১৭ অক্টোবর নির্ধারিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বৈঠকে মূলত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অবস্থান ও রাজনৈতিক ঐক্যের প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য গঠনের পথে আরেক ধাপ অগ্রসর
এর আগে, বুধবার সকালেই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কমিশনের চলমান কর্মকৌশল, রাজনৈতিক সংলাপের অগ্রগতি ও জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর খসড়া বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে কমিশনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ইতিবাচক সংলাপ শুরু হয়েছে, তা জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক স্থাপন করবে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’: নতুন সূচনার প্রতীক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’কে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের এক রূপরেখা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সনদে জাতীয় ঐক্য, সুশাসন, নির্বাচনী সংস্কার, দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ, এবং রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য বিস্তারিত নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম নীতিগত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে আরও জবাবদিহিমূলক করার দিকনির্দেশনাও থাকবে। বিশেষ করে, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
১৭ অক্টোবর দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক আয়োজন
আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের নেতা, কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা, লজিস্টিক সহায়তা ও গণমাধ্যম কাভারেজসহ সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
প্রধান উপদেষ্টার বার্তা: “এটি হবে জাতীয় ঐক্যের নতুন অধ্যায়”
কমিশনের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে বলেন,
“বাংলাদেশ আজ এমন এক সময়ের মুখোমুখি, যখন বিভেদের বদলে ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। জুলাই জাতীয় সনদ কেবল একটি নথি নয়, এটি আমাদের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতীক হবে।”
তিনি আরও বলেন, এই সনদ বাস্তবায়িত হলে দেশ একটি টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার এই উদ্যোগ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন,
“যদি সব দল আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে এই সনদ দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক দিনের বৈঠকগুলো হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited