আজ (মঙ্গলবার) দেশব্যাপী নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে ৫৬তম বিশ্ব মান দিবস (World Standards Day)।
‘ভালো মান—ভালো জীবন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পণ্য ও সেবার মান উন্নয়ন, তা বজায় রাখা এবং উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি উদযাপন করছে বাংলাদেশ।
প্রধান আয়োজক হিসেবে জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সারাদেশে নিয়েছে নানা কর্মসূচি। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভাগীয় ও জেলা অফিসগুলোতে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা, সেমিনার, র্যালি ও প্রচারমূলক কর্মসূচি।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড টাঙানো হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সহায়তায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে পাঠানো হচ্ছে সচেতনতামূলক খুদে বার্তা (এসএমএস)।
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা: ‘মান রক্ষায় সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে’
বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএসটিআই-এর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন,
“মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি পণ্যের মান রক্ষায়ও বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, শুধু শিল্প প্রতিষ্ঠান নয়, ভোক্তারাও মান সম্পর্কে সচেতন হলে বাজারে নিম্নমানের পণ্যের প্রবেশ রোধ করা সম্ভব হবে।
বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মো. আলমগীর এবং কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। বক্তারা মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় আরও জোরদারের আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী “মানোন্নয়ন ও টেকসই অর্থনীতি: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন,
“মান শুধু পণ্যের বিষয় নয়, এটি একটি সংস্কৃতি। উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মানের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা না হলে টেকসই অর্থনীতি গড়া সম্ভব নয়।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এস. এম. ফেরদৌস আলম। তিনি বলেন, “মান উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা দেশের শিল্প, ব্যবসা ও ভোক্তা সুরক্ষাকে শক্তিশালী করতে চাই। বিএসটিআই শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়, এটি এখন উদ্যোক্তা-বান্ধব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।”
বিশ্বজুড়ে মান দিবস: একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান
বিশ্ব মান দিবস প্রতি বছর ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হয়। ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (ISO), আন্তর্জাতিক ইলেকট্রোটেকনিক্যাল কমিশন (IEC) এবং আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU)-এর যৌথ উদ্যোগে দিবসটি উদযাপন শুরু হয়। এর মূল উদ্দেশ্য—পণ্য ও সেবার মান উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন উৎপাদনের মাধ্যমে মানবজীবনের মানোন্নয়ন।
বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালিত হয় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ভোক্তা সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে। বাংলাদেশও এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই এই দিবস পালন করে আসছে।
মানের গুরুত্ব: ভোক্তা সুরক্ষা থেকে রপ্তানি সাফল্য পর্যন্ত
বক্তারা মনে করেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার যুগে মান নিশ্চিতকরণ কেবল ভোক্তা সুরক্ষার বিষয় নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থানকেও শক্তিশালী করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত মানসম্পন্ন উৎপাদন ও কার্যকর সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা গড়ে উঠলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্যপণ্য, ইলেকট্রনিকস ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, “মানের বিষয়ে আপস নয়”—এই ধারণাকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। কারণ, মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন মানেই নিরাপদ জীবন, সুস্বাস্থ্য এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ব মান দিবস শুধু একটি প্রতীকী আয়োজন নয়; এটি শিল্প, বাণিজ্য ও ভোক্তা সংস্কৃতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। মান নিশ্চয়তার ধারাবাহিক প্রয়াসের মাধ্যমে বাংলাদেশ যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে, তেমনি জনগণও পাবে আরও নিরাপদ ও মানসম্মত জীবন।
