একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যা হবে সবার চোখের সামনে—রাতের অন্ধকারে লুকানো কোনো নির্বাচন নয়। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে প্রতিটি ভোটার নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন।”
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভাগীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস।
সিইসি বলেন, “আমাদের নিয়তের মধ্যে কোনো গলদ নেই। আমরা সত্যিকারের স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাই না। বরং আমরা চাই সাংবাদিকরা আমাদের পার্টনার হিসেবে পাশে থাকুক। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিহার্য।”
“ভোট দিতে পারবে সবাই, এমনকি প্রবাসীরাও”
ভোটারদের জন্য সহজ ও নিরাপদ ভোটদানের পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে সিইসি বলেন, “আমরা চাই, প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিক তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারুক। প্রবাসে যারা আছেন, তাদের জন্যও আমরা ব্যালট ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছি।”
তিনি জানান, এবার থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তারাও ভোট দিতে পারবেন। “যিনি ভোট সংগ্রহ করছেন, তিনি নিজে ভোট দিতে পারবেন না—এটা তো যুক্তিসঙ্গত নয়। তাই এবার থেকে সেই সুযোগও দেওয়া হচ্ছে,” বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
গণতন্ত্র রক্ষায় সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান সিইসি
নাসির উদ্দিন বলেন, “সিইসি হিসেবে যেমন আমার দায়িত্ব আছে, তেমনি নাগরিক হিসেবেও আপনাদের দায়িত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। সংবাদ প্রকাশের আগে যদি কোনো বিষয়ে সন্দেহ থাকে, দয়া করে আগে ফ্যাক্ট চেক করে নেবেন। এজন্য আমরা একটি ফ্যাক্ট চেক সেল গঠন করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার বা ভুয়া তথ্য ছড়ালে আগে যাচাই করুন—সত্য হলে প্রচার করুন। নির্বাচন কমিশনের সব কার্যক্রমই আমরা জনগণের সামনে উন্মুক্ত রাখতে চাই।”
“চট্টগ্রামের ভোটের ইতিহাস বদলাতে চাই”
চট্টগ্রামের ভোটের অতীত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা চাই চট্টগ্রামের ভোটের ইতিহাস এবার বদলে যাক। আগের মতো যেন না হয়, সেই নিশ্চয়তা আমি এখানকার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে পেয়েছি। ইনশাল্লাহ, এবার একটি স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।”
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপদ ভোটদানের পরিবেশ তৈরি করছে। অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি করছে বলেও জানান তিনি।
এনসিপির শাপলা প্রতীক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মন্তব্য
এনসিপির শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “শাপলা প্রতীক আমাদের নির্ধারিত তালিকায় না থাকায় দিতে পারিনি। তবে এনসিপিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা দেশের গণতান্ত্রিক ধারার অংশ। তারা ২০২৪ সালের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুন্দর করতে তারাও সহযোগিতা করবেন।”
“ইন্টারনেট বন্ধ নয়, এআই মোকাবিলায় সচেতনতা দরকার”
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এআই এখন বড় সমস্যা। বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ এআই সোর্স শনাক্ত করা যায় না। কেউ কেউ বলছেন ইন্টারনেট বন্ধ করতে হবে, কিন্তু আমরা সেই মতের পক্ষে নই। ইন্টারনেট বন্ধ নয়, বরং সচেতনতা বাড়িয়ে এর অপব্যবহার ঠেকাতে হবে।”
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনার ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন। সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
