গুজব, অপতথ্য, বিভ্রান্তিকর সংবাদ ও ডিপফেক প্রযুক্তির ভয়াবহতা এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তথ্য কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বহুগুণ বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট (নিমকো) মিলনায়তনে বিসিএস (তথ্য) ৪২তম পেশাগত প্রবেশক পাঠ্যধারার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
তথ্য সচিব বলেন, “জাতীয় নির্বাচনসহ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুজব, অপতথ্য ও ডিপফেক প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ রুখে দিতে তথ্য কর্মকর্তাদের আপসহীন ঢাল হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের তথ্য প্রবাহকে সঠিক, স্বচ্ছ ও বস্তুনিষ্ঠ রাখতে হলে এই কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয়, দায়িত্বশীল এবং প্রযুক্তি-দক্ষ হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের যুগে মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, ফেক নিউজ ও ডিপফেকের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এই অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে তথ্যের শক্তি ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে। বিশেষত, একটি মডেল নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে হলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় সাধন করে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হবে।”
মাহবুবা ফারজানা জানান, সরকারের উন্নয়ন, অর্জন ও নাগরিকবান্ধব কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরতে তথ্য কর্মকর্তাদের সৃজনশীল যোগাযোগ কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। “তথ্য প্রবাহের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে আমরা যেন সত্য, নির্ভরযোগ্য ও ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারি—এই চেতনা থেকেই আমাদের প্রতিটি কাজ পরিচালিত হওয়া উচিত,” বলেন তিনি।
“ডিপফেক হচ্ছে নতুন যুগের বিভ্রান্তি”
তথ্য সচিব তাঁর বক্তব্যে ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে বিশেষ সতর্কতা প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ডিপফেক হলো নতুন যুগের বিভ্রান্তি—যা সহজেই মানুষের বিশ্বাস, চরিত্র ও ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এই প্রযুক্তির বিরুদ্ধে তথ্য কর্মকর্তাদের ডিজিটাল লিটারেসি বা প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন জরুরি। সত্য যাচাই (ফ্যাক্ট-চেকিং) এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সক্ষমতাই এখন তথ্য কর্মকর্তাদের প্রধান হাতিয়ার।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, তিন মাসব্যাপী এই পেশাগত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মকর্তারা নিজেদের দক্ষতা, যোগাযোগক্ষমতা ও পেশাদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করতে পারবেন।
‘নিয়মানুবর্তিতা ও নিষ্ঠাই পেশাদারিত্বের ভিত্তি’
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহম্মদ হিরুজ্জামান বলেন, “নিমকো কেবল একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নয়, এটি ভবিষ্যতের রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার চালিকাশক্তি গড়ে তোলার কেন্দ্র। এখানে অর্জিত জ্ঞান ও শৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের সারা কর্মজীবনের পথনির্দেশক হবে।”
তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, “নিমকো আপনাদেরই প্রতিষ্ঠান, তবে এখানে শৃঙ্খলা, সময়নিষ্ঠা ও নিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় একজন তথ্য কর্মকর্তার নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।”
২২ জন কর্মকর্তার অংশগ্রহণ
এই ৪২তম পেশাগত প্রবেশক পাঠ্যধারায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তিনটি সংস্থা—চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং তথ্য অধিদফতর (পিআইডি)—থেকে মোট ২২ জন কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার, ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, পারভীন সুলতানা রাব্বীসহ ইনস্টিটিউটের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, তথ্য সচিবের বক্তব্য তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও অনুপ্রেরণা আরও দৃঢ় করেছে। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, এই প্রশিক্ষণ তাঁদেরকে একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং সত্যনিষ্ঠ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
