আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) একদম স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেছেন, “আমরা আয়নার মতো পরিস্কার ও স্বচ্ছ একটি নির্বাচন করতে চাই, যাতে দেশের মানুষ ও বিশ্ব সম্প্রদায় স্পষ্টভাবে দেখতে পারে—বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলনকক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, “আমরা চাই গণমাধ্যম আমাদের সহযোগী হোক। কারণ গণমাধ্যমই পারে জনগণের কাছে বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে। মিথ্যা তথ্য বা বিভ্রান্তিকর প্রচার ঠেকাতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, মিডিয়া আমাদের অংশীদার হিসেবে কাজ করুক।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী নির্বাচন হবে জনগণের অংশগ্রহণে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও সম্পূর্ণ জবাবদিহিমূলকভাবে। আমরা চাই এমন এক নির্বাচন, যা আয়নার মতো পরিষ্কার হবে। যাতে সবাই দেখতে পায়—বাংলাদেশ গণতন্ত্রের চর্চায় আরও একধাপ এগিয়েছে।”
মতবিনিময় সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ সংলাপ চলে দুপুর পর্যন্ত। এতে ২৫ জন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক অংশ নেন।
ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক জানান, বিকেলে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে আরও একটি পর্ব অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্রায় ১৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণের সম্মতি জানিয়েছেন।
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা শুরু থেকেই চাই সবকিছু সবার সামনে উন্মুক্ত থাকুক। নির্বাচন হবে জনগণের, তাই জনগণের জানার অধিকার নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দুটোই রক্ষা করা হবে।”
তিনি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আমাদের চোখ ও কান। যেখানেই কোনো সমস্যা, অনিয়ম বা বিভ্রান্তি দেখা দেবে, সেটি গণমাধ্যমই প্রথম জানাবে। তাই আমরা চাই, একটি গঠনমূলক সম্পর্কের মাধ্যমে আপনারা আমাদের পাশে থাকুন।”
ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ধারাবাহিক সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই সংলাপের প্রথম দিন অংশ নেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা। তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দেন।
আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং বিকেলে নারী নেত্রীদের সঙ্গে সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন। এসব আলোচনার মাধ্যমে ইসি দেশের রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত সংগ্রহ করছে—যাতে নির্বাচনী প্রস্তুতির প্রতিটি ধাপ আরও কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনকালীন সময় থেকে ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপদ ভোটকেন্দ্র, স্বচ্ছ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া, ফলাফল ব্যবস্থাপনা এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত এক কমিশনার বলেন, “আমরা চাই, ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সাংবাদিকরা যেন নির্ভয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারে, এবং প্রার্থীরা যেন সমান সুযোগ পায়। এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলেই একটি আদর্শ নির্বাচন সম্ভব।”
সিইসি নাসির উদ্দিন শেষে বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ আজ পরিপক্ক। তারা গণতন্ত্র চায়, ভোট দিতে চায়। আমরা চাই তাদের সেই অধিকার সুরক্ষিত থাকুক। এই নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের বিভ্রান্তি বা অনিশ্চয়তা না থাকে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।”
নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা ইতিবাচক হিসেবে স্বাগত জানান। তারা বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যম ও ইসির মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও তথ্য বিনিময় সবচেয়ে জরুরি।
ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সংলাপ চলবে বিভিন্ন পর্যায়ে এবং নির্বাচনের আগে সব পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে কমিশন চূড়ান্ত রোডম্যাপ তৈরি করবে—যাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন “স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর” হয়।
