বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথে থাকা বাধা অবশেষে কেটে গেছে। হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে চেম্বার আদালত রোববার আদেশ দিয়েছেন, ফলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে ১৫টি ক্লাব। এই রায়ের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় আইনি জটিলতা দূর হলো বলে মনে করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা।
আজ (রোববার) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ববর্তী আদেশ স্থগিত রাখেন। এর ফলে বিসিবি নির্বাচনে কাউন্সিলর মনোনয়ন ও ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে যে আইনি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল, তা আপাতত দূর হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশ ও পটভূমি
এর আগে, গত সপ্তাহে হাইকোর্ট জেলা ও বিভাগীয় অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পাঠানো চিঠির কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন। একই সঙ্গে ১৫টি ক্লাবের নির্বাচনে অংশগ্রহণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন আদালত।
এই আদেশের ফলে বিসিবির আসন্ন নির্বাচনের সূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ায় ক্রিকেট অঙ্গনে তৈরি হয় উদ্বেগ ও জল্পনা।
তবে বিসিবি পক্ষ থেকে দ্রুত আপিল আবেদন করা হলে বিষয়টি চেম্বার আদালতে ওঠে। আজকের আদেশে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশও স্থগিত থাকে, অর্থাৎ কার্যত সেটি অকার্যকর হয়েছে। ফলে নির্বাচনী কার্যক্রম এখন নির্বিঘ্নে চলতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির আইনজীবীরা।
আদালতের আদেশে স্বস্তি ক্রিকেট প্রশাসনে
চেম্বার আদালতের এই রায়কে ‘বিসিবি নির্বাচনের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন বোর্ডের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুকন উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন,
“হাইকোর্টের আদেশে নির্বাচন কার্যক্রমে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, চেম্বার আদালতের আদেশে তা এখন পরিষ্কার। এখন আর কোনো আইনি বাধা নেই। নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।”
এদিকে আদালতের এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছে বিসিবি নির্বাচন কমিশনও। কমিশনের এক সদস্য বলেন, “আমরা প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিলাম, এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কাউন্সিলর তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব। নির্বাচন যেন সময়মতো হয়, সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার।”
১৫ ক্লাবের অংশগ্রহণে নতুন উদ্দীপনা
এই ১৫ ক্লাবের অংশগ্রহণ বিসিবি নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ক্লাবভিত্তিক ভোটাররাই মূলত নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করেন। পূর্বে যেসব ক্লাবের সদস্যপদ বা কাউন্সিলর মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, এখন তারা নতুন করে নির্বাচনী দৌড়ে ফিরে এসেছে।
ক্রীড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই রায় শুধু বিসিবি নয়, পুরো ক্রিকেট কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ক্লাব পর্যায়ের প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছিল। আদালতের এই স্পষ্ট সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের নির্বাচন প্রক্রিয়াকেও পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দেবে।”
নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি জোরদার
চেম্বার আদালতের সিদ্ধান্তের পর বিসিবির নির্বাচন কমিশন এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, মনোনয়ন ফরম বিতরণ এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, নতুন কোনো বাধা না এলে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে বিসিবি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, “আমরা চাই নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণভাবে ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে হয়। যেহেতু আদালত এখন স্পষ্ট আদেশ দিয়েছেন, তাই কোনো ধরনের বিভ্রান্তি বা দেরির আশঙ্কা নেই।”
স্থিতিশীল প্রশাসনের আশায় ক্রিকেট অঙ্গন
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ই ছিল এই নির্বাচনের আইনি জটিলতা। চেম্বার আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি মিলেছে। এখন নজর নির্বাচনের তারিখ ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দিকে।
দেশের ক্রিকেট অঙ্গন আশা করছে, এবার একটি স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা ভবিষ্যতে বিসিবির নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা আনবে। কারণ, মাঠের সাফল্যের পাশাপাশি প্রশাসনিক স্থিতিশীলতাও বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নের অন্যতম শর্ত।
