জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন খুব শিগগিরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জমা দেবে। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, প্রতিবেদনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের পরামর্শ গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই তথ্য জানান আলী রীয়াজ। বৈঠকে জুলাই সনদের বিষয়বস্তু, তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ইউনূসের সন্তুষ্টি ও ধন্যবাদ
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। সকল দলের অংশগ্রহণ ও পারস্পরিক সম্মানই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত।”
তিনি কমিশনের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে নির্দেশ দেন, কাজের চূড়ান্ত অগ্রগতি দ্রুততম সময়ে সরকারের কাছে উপস্থাপন করার জন্য।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, ড. আসিফ নজরুল ও মানবাধিকার সংগঠক আদিলুর রহমান খান বৈঠকে অংশ নেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় আশাবাদ
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সহযোগিতা পেয়েছি। দেশের গণমাধ্যমও আমাদের কাজকে অসাধারণভাবে সমর্থন দিয়েছে। এই ইতিবাচক সাড়া দেখেই আমরা মনে করি, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি সফলতার পথে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদে বর্ণিত রাজনৈতিক সংস্কারের ধাপগুলো এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। কমিশন যে সুপারিশগুলো দিচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে গেলে বাস্তব পরিবর্তনের সূচনা ঘটবে।”
জুলাই সনদ: ঐকমত্যের নীলনকশা
কমিশনের আলোচনায় উঠে আসে ‘জুলাই সনদ’-এর মূল বিষয়বস্তু— যেখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন, নির্বাচনী কাঠামো সংস্কার, স্বচ্ছ প্রশাসন ও জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক আচরণ প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, এই সনদের প্রয়োগ নিশ্চিত হলে রাজনৈতিক সহাবস্থান ও পারস্পরিক আস্থার নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আমরা চাই না এটি কেবল একটি দলিল হয়ে থাকুক। নাগরিক অংশগ্রহণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সংস্কারের রোডম্যাপ হিসেবে এটি কাজ করুক।”
চূড়ান্ত প্রতিবেদনের কাঠামো
কমিশন সূত্র জানায়, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তিনটি অংশ থাকবে—
১️⃣ রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের সারসংক্ষেপ,
২️⃣ কমিশনের প্রস্তাবিত নীতি ও কাঠামো,
৩️⃣ বাস্তবায়নের রূপরেখা ও সময়সীমা।
এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে রাজনৈতিক সংলাপের জন্য নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রস্তাব, নির্বাচনী সংস্কার, সুশাসন এবং নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উপায়।
সামনের পথ
কমিশনের সদস্যরা আশা প্রকাশ করেছেন, সরকারের হাতে প্রতিবেদন পৌঁছানোর পর তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছেন, “ঐকমত্যের পথে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া গেছে, এখন দরকার তা টিকিয়ে রাখার আন্তরিকতা।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি হতে পারে একটি রাজনৈতিক রোডম্যাপ— যা দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে দিতে পারে।
