প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে পরিবেশের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পরিবেশকে উপেক্ষা করলে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ মৎস্যসম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তিনি সতর্ক করে দেন, “প্রকৃতির প্রতি নির্দয় আচরণ অব্যাহত থাকলে একদিন মাছও হয়তো আমাদের কপাল থেকে হারিয়ে যাবে।”
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, মৎস্যচাষী, উদ্যোক্তা ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “মাছ আমাদের জন্য প্রকৃতির উপহার, আল্লাহর দান। অথচ আমরা এত নির্দয় হয়ে পড়েছি যে প্রকৃতিকে আঘাত করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে খাদ্য ও জীবিকার নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করছি।”
তিনি বলেন, নদীকে আমরা ‘শাসন’ করার কথা বলি, কিন্তু ‘পালনের’ কথা বলি না। নদীতে বর্জ্য ও বিষাক্ত রাসায়নিক ফেলা, নির্বিচারে মাছ আহরণ এবং অবৈধ জাল ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির প্রতি নির্মমতা দেখাচ্ছি। “এটি ঠেকানো শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং নাগরিক দায়িত্বও বটে,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও জলসম্পদ মৎস্য উৎপাদনে বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশে প্রায় ১২ লাখ নারীসহ লাখো মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছ চাষ ও আহরণের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু প্রকৃত মৎস্যজীবীরা নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। “আমরা শুধু মাছের দাম বা টাটকা কি না সেটা দেখি, কিন্তু যারা শ্রম দিয়ে প্রতিদিন মাছ আমাদের কাছে পৌঁছে দেন, তাদের কথা ভুলে যাই,” উল্লেখ করেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গভীর সমুদ্র শুধু বেশি মাছ ধরার ক্ষেত্র নয়, বরং নতুন শিল্প গড়ে তোলার সুযোগ। এজন্য গবেষণা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিদিন প্রকৃতির প্রতি সদয় হওয়ার শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ ও তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মৎস্য খাতকে টেকসইভাবে সমৃদ্ধ করা সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে নয়টি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং মন্ত্রণালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেনও বক্তব্য দেন।
এবারের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের প্রতিপাদ্য— “অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি”। সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচিতে প্রদর্শনী, কর্মশালা ও আলোচনা সভার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি, মাছের সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হবে।