লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে কমপক্ষে চারজন অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। আহত ও উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ২৬ বাংলাদেশি। এই দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছে লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট, যা শনিবার (১৫ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে প্রকাশ করেছে।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে, উপকূলীয় শহর আল-খুমসের কাছে। লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, দুটি নৌকা একসাথে ডুবে যায়। প্রথম নৌকায় ছিলেন ২৬ জন, যাদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এদের মধ্যে চারজন নিহত হয়েছেন।
দ্বিতীয় নৌকায় ছিলেন ৬৯ জন যাত্রী, যাদের মধ্যে দুইজন মিশরীয় এবং বাকি সকল যাত্রী সুদানের নাগরিক। তবে দ্বিতীয় নৌকার যাত্রীদের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এ নৌকায় ছিল আটজন শিশু, যা দুর্ঘটনার মানবিক দিককে আরও করুণ করে তুলেছে।
উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ ব্যবস্থা
লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের ছবি প্রকাশ করেছে। সেখানে কিছু মানুষকে থার্মাল ব্ল্যাঙ্কেটে মোড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। পাশাপাশি কয়েকজনের মরদেহ কালো বডিব্যাগে উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে লিবিয়ার কোস্টগার্ড এবং আল-খুমস বন্দর নিরাপত্তা বিভাগ। মরদেহগুলো পরে স্থানীয় প্রসিকিউশনের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে লিবিয়া ইউরোপমুখী অভিবাসীদের প্রধান ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে। ফলে নৌডুবি, নিখোঁজ হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা লেগে রয়েছে নিয়মিত।
মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
এ ধরনের দুর্ঘটনা সম্প্রতি বেড়ে গেছে। এর আগে বুধবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) জানিয়েছিল, লিবিয়ার উপকূলে একটি রাবারের নৌকা ডুবে কমপক্ষে ৪২ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মৃত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিবিয়ায় অভিবাসীদের দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তাহীন উপকূলের কারণে এমন দুর্ঘটনা প্রায় নিয়মিত। এতে শিশু, মহিলা ও প্রবীণসহ নানা দুর্বল গোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সভায় ইতোমধ্যেই লিবিয়ার অভিবাসী আটককেন্দ্রগুলো বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও এখনো কার্যকর কোনো সমাধান হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, অভিবাসীরা অসংরক্ষিত নৌকায় যাত্রা করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রবাসীদের ওপর প্রভাব
বাংলাদেশের দূতাবাস লিবিয়ায় এই ধরনের দুর্ঘটনার বিষয়টি মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। দুর্ঘটনায় যারা আহত বা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিকরা এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন রুট ব্যবহার করার আগে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবির এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে আবারও এক সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে—ইউরোপমুখী অভিবাসীদের জন্য নৌপথ অত্যন্ত বিপজ্জনক। উদ্ধারকাজ ও মানবিক সহায়তার পাশাপাশি নিরাপদ অভিবাসন রুট তৈরির তাগিদ আরও জোরালোভাবে উঠেছে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited