আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে, আহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার মানুষ। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি সব সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে আমরা আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কাজে মনোযোগ দিচ্ছি।”
ভয়াবহ এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে গত সোমবার রাতে। ৬ দশমিক ৩ মাত্রার এই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে উত্তরাঞ্চলীয় বলখ ও সামাঙ্গন প্রদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বলখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে।
স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে কম্পনটি অনুভূত হয়, যা প্রায় ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। হঠাৎ এই ভূমিকম্পে জনজীবনে নেমে আসে আতঙ্ক। অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে খোলা মাঠে ছুটে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও ধ্বংসযজ্ঞ
বলখ ও সামাঙ্গন প্রদেশের কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, বাজার ও মসজিদ ধসে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের প্রাথমিক হিসেবে, শতাধিক ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও কয়েকশো ঘরবাড়ি।
বলখ প্রদেশের গভর্নর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, “ভূমিকম্পের সময় বেশিরভাগ মানুষ ঘরে অবস্থান করছিলেন। পুরোনো কাঁচা ঘরগুলোর ছাদ ও দেয়াল ধসে পড়ায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।”
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন, আফগান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আহতদের চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা
আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আহতদের মধ্যে বেশিরভাগের আঘাত মাথা, হাত-পা ও মেরুদণ্ডে লেগেছে, তবে তাদের অবস্থা গুরুতর নয়। অনেককে মাজার-ই-শরিফের প্রধান সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আফগান রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য অস্থায়ী তাঁবু, খাবার ও চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করছি। যারা বাড়িঘর হারিয়েছে, তাদের পুনর্বাসনে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক সহায়তা
তালেবান সরকারের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে সরকার সর্বাত্মকভাবে থাকবে। প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে দেশব্যাপী ত্রাণ তহবিল চালু করা হচ্ছে।”
জাতিসংঘের আফগানিস্তান মিশন (UNAMA) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বার্তায় গভীর শোক প্রকাশ করে জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জরুরি মানবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, তারা স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ আফগানিস্তান
আফগানিস্তান দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি। দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে প্রায়ই মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।
মাত্র এক বছর আগেই একই অঞ্চলে ধারাবাহিক ভূমিকম্পে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল। দেশটির পরিকাঠামো দুর্বল হওয়ায় প্রায়ই এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বর্তমানে আফগানিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব তৈরি করছে। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জামান আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রমের ফলে হতাহতের সংখ্যা সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited