জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে টোকিও থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।
এমন ঘোষণা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের নিশ্চিতকরণ
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি ও সংলাপ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিশেষ করে পূর্ব এশিয়া, কোরীয় উপদ্বীপ ও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো প্রশংসার যোগ্য।”
ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
একই দিনে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মনোনয়নের বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “জাপানের প্রধানমন্ত্রী আমার শান্তি প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যা আমার জন্য এক বড় সম্মানের বিষয়।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমার প্রশাসনের সময় আমরা কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা প্রশমিত করেছি, ইসরায়েল ও আরব বিশ্বের মধ্যে নতুন কূটনৈতিক সেতুবন্ধন তৈরি করেছি, এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছি। আমি বিশ্বাস করি, এ প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে।”
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা এ মনোনয়নকে “রাজনৈতিক প্রতীকী পদক্ষেপ” বলে আখ্যা দিয়েছেন। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিরোশি কাওয়াগুচি বলেন, “জাপানের এই পদক্ষেপ মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার রাখার একটি কৌশল। এটি বাস্তব শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তা।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও ট্রাম্প প্রশাসন কিছু ক্ষেত্রে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করেছিল, তবে একই সময়ে বৈশ্বিক উত্তেজনা ও বাণিজ্যযুদ্ধও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলা কঠিন।”
নোবেল মনোনয়ন প্রক্রিয়া
প্রসঙ্গত, নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ গোপনীয়, তবে রাষ্ট্রপ্রধান, সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পূর্ববর্তী বিজয়ীরা প্রার্থী মনোনীত করতে পারেন। নরওয়ের নোবেল কমিটি এরপর প্রাথমিক তালিকা থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে মূল্যায়ন করে থাকে।
জাপানের পক্ষ থেকে এ মনোনয়ন জমা পড়লে, তা ২০২৬ সালের পুরস্কারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
ট্রাম্পের নোবেল আকাঙ্ক্ষা পুরোনো বিষয়
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে আগ্রহ নতুন নয়। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিনি কয়েকবার প্রকাশ্যে বলেছেন যে তাঁর কর্মকাণ্ড “শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।”
২০১৮ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন–এর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পরও দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তাঁকে নোবেলের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। যদিও তখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ইসরায়েল–সংযুক্ত আরব আমিরাত শান্তিচুক্তি (আব্রাহাম অ্যাকর্ডস) স্বাক্ষরিত হয়, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কূটনৈতিক দিগন্ত খুলে দেয়। তবে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসে, যা আন্তর্জাতিক সমালোচনার জন্ম দেয়।
জাপান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের কূটনৈতিক তাৎপর্য
বিশ্লেষকদের মতে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচির এই ঘোষণা দুই দেশের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও মজবুত করার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখাই জাপানের কৌশলগত অগ্রাধিকার।
টোকিও-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেইকো তানাকা বলেন, “এই মনোনয়ন ট্রাম্পের প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা নয়, বরং কৌশলগত বার্তা—জাপান যুক্তরাষ্ট্রকেই তার প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে দেখতে চায়।”
নোবেল কমিটির প্রতিক্রিয়া
নরওয়ের নোবেল কমিটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কমিটির এক সদস্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “মনোনয়ন পাওয়া মানেই নির্বাচিত হওয়া নয়। কমিটি রাজনৈতিক বিবেচনা নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত অবদানই মূল্যায়ন করে।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited