জাপানে দক্ষ চালকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে বাংলাদেশে একটি আধুনিক ড্রাইভিং স্কুল স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছেন জাপানের বিশিষ্ট উদ্যোক্তা ও রাজনীতিবিদ মিকি ওয়াতানাবে।
তিনি শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে এ ঘোষণা দেন।
ওয়াতানাবে জাপানের খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ওয়াতামি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের ড্রাইভিং স্কুল গড়ে তুলতে চাই। ইতোমধ্যে আমরা প্রায় ১২ হাজার বর্গমিটারের একটি জায়গা খুঁজছি। জাপানে দক্ষ চালকের চাহিদা অত্যন্ত বেশি, আর বাংলাদেশ সে চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
ঢাকায় উপযুক্ত জমি চিহ্নিতের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
ওয়াতানাবের ঘোষণার পরপরই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঢাকার উপকণ্ঠে স্কুল স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা চাই এই সহযোগিতা আরও গভীর হোক। প্রশিক্ষণ, ভাষা ও সংস্কৃতিগত প্রস্তুতি— এই তিনটি বিষয়েই আমাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে।”
পূর্বের চুক্তির ধারাবাহিক উদ্যোগ
এ বৈঠকটি মূলত অধ্যাপক ইউনূসের গত মে মাসে জাপান সফরের ধারাবাহিকতা। ওই সফরে জাপানি উদ্যোক্তারা আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।
ওয়াতানাবে জানান, তিনি ইতোমধ্যে নরসিংদীর মনোহরদীতে একটি ভাষা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে নির্মাণ ও কৃষি খাতে কাজের জন্য ৫২ জন কর্মীকে জাপানে পাঠিয়েছি। বর্তমানে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আমরা এই সংখ্যা আরও বাড়াব।”
সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার প্রশিক্ষণেও গুরুত্ব
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে জাপানি সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও আচরণ শেখানোর ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, “কর্মীদের শুধু কারিগরি প্রশিক্ষণ নয়, বরং জাপানি সমাজ ও কর্মসংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। এতে তারা দেশটিতে গিয়ে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।”
অধ্যাপক ইউনূস ওয়াতানাবেকে সেবা, নার্সিং, নির্মাণ ও কৃষি খাতেও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এসব খাতে দক্ষ বাংলাদেশিরা জাপানে ভালো বেতনে কাজ করতে পারেন।
ওয়াতানাবে এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বলেন, “আমরাও এ খাতগুলোতে কাজ করতে চাই।”
নতুন প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহ
ওয়াতানাবে জানান, জাপানি কোম্পানিগুলোকে যেন মনোহরদী পর্যন্ত যেতে না হয়, সেজন্য তিনি ঢাকা বা আশপাশের এলাকায় আরেকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করতে চান।
তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নবগঠিত “জাপান সেল”-এর প্রশংসা করে বলেন, “এই সেল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ও জাপানি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সহযোগিতা সহজ করছে।”
প্রধান উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, অব্যবহৃত কোনো আইটি পার্ক বা সরকারি ভবন চিহ্নিত করে তা জাপানি ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে রূপান্তর করার উদ্যোগ নিতে।
তিনি বলেন, “ড্রাইভিং স্কুলের জন্য জমি এবং নতুন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।”
ভাষা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে বছরে মাত্র দু’বার পরীক্ষা নেওয়া হয়, যা বাড়াতে হবে, কারণ জাপানে কাজের সুযোগ ক্রমশ বাড়ছে।”
ওয়াতানাবের মানবিক উদ্যোগ
বৈঠকে ওয়াতানাবে স্মরণ করেন, এক দশকেরও বেশি আগে তিনি গাজীপুরের নারায়ণকূলে অধ্যাপক ইউনূসের দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, “বিদ্যালয়টিতে এখন ১,৫০০ শিক্ষার্থী পড়ছে। তারা অত্যন্ত ভালো করছে। আমি বাংলাদেশের যুবকদের সম্ভাবনায় আশাবাদী।”
বৈঠকে এসডিজি সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited