দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো এশিয়া সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ শনিবার শুরু হতে যাওয়া এই সফর ঘিরে ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সফরে তিনি অংশ নেবেন একাধিক সম্মেলনে, করবেন বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং সই করবেন নানা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও শান্তি চুক্তি।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, সফরের শেষ দিনে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে এক বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক করবেন ট্রাম্প। যদিও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতের গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়েছে—এমন কোনো বৈঠক সূচিতে নেই।
বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানে বড় চুক্তির প্রত্যাশা
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে “সবকিছুর ওপর একটি সমন্বিত চুক্তি” করতে চান ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান জনগণের জন্য বাস্তব সাফল্য বয়ে আনবেন। তিনি একাধিক বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ চুক্তি সই করবেন।”
৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আক্রমণাত্মক কূটনীতির চর্চা করে আসছেন। শুল্কনীতি, বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা ও কৌশলগত মিত্রতা—সব ক্ষেত্রেই তিনি আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছেন।
মালয়েশিয়া থেকে শুরু হবে সফর
ট্রাম্পের সফরসূচির প্রথম গন্তব্য মালয়েশিয়া। সেখানে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেবেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রথম মেয়াদে এই সম্মেলন তিনি একাধিকবার এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
এই সফরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তির তদারকি করবেন ট্রাম্প নিজেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প আসন্ন নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নিজেকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন।
জাপানে নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ
মালয়েশিয়া সফর শেষে ট্রাম্প সোমবার টোকিও পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়া তাকাইচি রক্ষণশীল রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত।
বিশ্ববাণিজ্যে ট্রাম্পের আরোপিত কঠোর শুল্কের ধাক্কা থেকে জাপান কিছুটা রেহাই পেয়েছে। তবুও দুই দেশের মধ্যে ‘অন্যায় বাণিজ্য ভারসাম্য’ নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগ এখনো রয়ে গেছে। তাই টোকিও বৈঠককে ওয়াশিংটন-টোকিও সম্পর্কের নতুন সংলাপের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলন ও বড় বৈঠক
ট্রাম্পের সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। বুধবার তিনি বুসান শহরে পৌঁছাবেন, যেখানে শুরু হবে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলন। এ সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ ও মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধানদের সঙ্গে এক নৈশভোজেরও আয়োজন করা হয়েছে।
সবশেষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের মধ্যে বহুল আলোচিত বৈঠক। এটি হবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে থাকছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক, বিরল খনিজ রপ্তানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা, এবং ফেন্টানিল পাচার রোধে বেইজিংয়ের ভূমিকা।
ঝুঁকি ও প্রত্যাশার ভারসাম্যে
ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন এ বৈঠককে “ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু উচ্চ সম্ভাবনাময় উদ্যোগ” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর ভাষায়, “এই বৈঠক ভেস্তে গেলে এর প্রভাব ব্যাপক হবে। এটি যেন লোহার পাশা ছোড়ার মতো—সফল হলে ফল বড়, কিন্তু ব্যর্থ হলে বিপদও কম নয়।”
বিশ্লেষকরা অবশ্য বড় কোনো অগ্রগতি প্রত্যাশা করছেন না। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক রায়ান হাস বলেন, “এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কে নাটকীয় পরিবর্তন আনবে না। বরং এটি চলমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতার একটি ধাপ মাত্র।”
তবে একথা স্পষ্ট—ট্রাম্পের এই সফর শুধুই বাণিজ্য কূটনীতি নয়, বরং তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের বৈশ্বিক নেতৃত্ব পুনর্গঠনের এক প্রতীকী প্রচেষ্টা।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited