ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পেরনামবুকো প্রদেশে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার গভীর রাতে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। দুর্ঘটনাটি ঘটে যখন একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টো দিকে চলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।
শনিবার এক বিবৃতিতে দেশটির পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে মোট ৩০ জন যাত্রী ছিলেন। বাসটি ব্রুমাডো শহর থেকে সান্তা ক্রুজ দো কাপিবারিবে যাচ্ছিল। মাঝপথে ভুল লেনে প্রবেশ করে চালক রাস্তার পাশে থাকা পাথরে আঘাত করলে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়।
পুলিশের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, চালক পাথরে ধাক্কা দেওয়ার পর বাসটি আবারও মূল রাস্তায় ফিরে আসে, কিন্তু অতিরিক্ত গতি ও ভারসাম্য হারানোর কারণে সেটি সামনের দিকের উঁচু মাটির ঢিবিতে সজোরে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই বহু যাত্রী নিহত হন। বেশ কয়েকজন যাত্রী বাসের বাইরে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।
দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে নেমে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা মরদেহ উদ্ধার এবং আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসটি উল্টে যাওয়ার পর এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চারদিকে কান্না আর আর্তনাদের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। উদ্ধারকারীরা দ্রুত পৌঁছালেও অন্ধকার ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় উদ্ধার কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, বাসের চালক সামান্য আহত হয়েছেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার শরীরে মদ্যপানের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত গতি এবং ভুল লেনে প্রবেশ করাই দুর্ঘটনার মূল কারণ হতে পারে।
দেশটির গণমাধ্যম O Globo জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পেরনামবুকোর ইনগাজেইরা নামক এলাকায়। রাস্তার এই অংশটি ঘূর্ণায়মান এবং পাথুরে, যেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেশি। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ওই এলাকায় গত এক মাসেই তিনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বার্তায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সবাই এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে আছি।”
প্রেসিডেন্ট লুলা আরও বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সতর্কভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে ব্রাজিলে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ রয়েছে। দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এর মধ্যে বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটে অতিরিক্ত গতি, ঘুমঘুম অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং সড়কের অনিরাপদ অবস্থা থেকে।
পেরনামবুকো প্রদেশের গভর্নর রাকেল লিরা এক বিবৃতিতে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় সময় শনিবার সকাল পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বাসটির নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধার করছেন। ঘটনাস্থল ঘিরে কৌতূহলী জনতার ভিড় বাড়ছে।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো— নিরাপদ সড়কের দাবিতে নিয়মকানুন ও সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
