আসন্ন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ২৯ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়া যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিউল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৯ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।” এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকর্তাও জানিয়েছেন, সম্মেলনের সময় তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে পারেন। সম্মেলন চলবে ১ নভেম্বর পর্যন্ত।
দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, সম্মেলনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা ‘উড়িয়ে দেওয়া যায় না’। এই কূটনৈতিক সম্ভাবনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরকাড়া বিষয় হিসেবে ধরা হচ্ছে, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।
দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গিওংজুতে অবস্থান করবেন। এই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে তার সম্ভাব্য বৈঠকও হতে পারে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন যে, চীনের রেয়ার-আর্থ টেকনোলজি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জবাবে তিনি সি চিনপিংয়ের সঙ্গে এপেক বৈঠক বাতিল করতে পারেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বুধবার সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি’কে জানান, ট্রাম্প এখনও চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্প এপেক সম্মেলনের পাশাপাশি আশা প্রকাশ করেছেন যে তিনি সম্ভবত এ বছর আবারও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করতে চাইবেন। পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কিম ভবিষ্যতে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।
এটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের পরে কিম জং উনের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন বৈঠক। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দুই নেতার মধ্যে তিন দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সমঝোতা হয়নি, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে। এরপর থেকে পিয়ংইয়ং নিজেকে একটি ‘অপরিবর্তনীয়’ পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই সফর কেবল এপেক সম্মেলনের অংশ নয়; এটি একটি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা যা চীন ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চুক্তি সম্বন্ধে আলোচনার সুযোগ দিতে পারে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে ট্রেড ও রেয়ার-আর্থ প্রযুক্তি রপ্তানি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা এই সফরের গুরুত্ব আরও বাড়াচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়া সফরে ট্রাম্পের কর্মসূচি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকবে। বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও অর্থনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও তিনি দেশটির সরকার ও শিল্পোদ্যোগের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে এপেকের গুরুত্ব অপরিসীম। ২১টি এশিয়া-প্যাসিফিক দেশ এই ফোরামের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি করার লক্ষ্য রাখে। ট্রাম্পের সফর কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ককে নয়, পুরো অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া সফর শুধুমাত্র একটি দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বৈঠক নয়, এটি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এবং উত্তর কোরিয়ার পরমাণু সংক্রান্ত আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষণ। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এই সফরের দিকে রয়েছে, যা কূটনৈতিক সূক্ষ্মতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে ধরা হচ্ছে।
