ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে নয়াদিল্লি শিগগিরই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে। এমন দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে ভারতীয় সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই বক্তব্যের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
‘মোদি আশ্বস্ত করেছেন’
হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন,
“তিনি (মোদি) আমাকে আশ্বস্ত করেছেন—রাশিয়া থেকে আর তেল কেনা হবে না। যদিও রাতারাতি এটি সম্ভব নয়, তবে প্রক্রিয়াটি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই শেষ হবে।”
ওয়াশিংটন থেকে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রুশ তেল কেনার কারণে গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়। এমনকি এর জেরে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের জন্য এই প্রতিশ্রুতি সহজ নয়। কারণ রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের কৌশলগত মিত্র—প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও মহাকাশ সহযোগিতার ক্ষেত্রেও দুই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গভীর।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরও নয়াদিল্লি সেই সম্পর্ক স্বাভাবিক রেখেছে। মোদি এর আগেও যুক্তি দিয়েছিলেন, “রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি ভারতের অর্থনৈতিক বাস্তবতার অংশ।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও চাপ ক্রমেই বাড়ছে, যার ফলে ভারতকে একটি জটিল কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে।
মোদি–ট্রাম্প সম্পর্ক মেরামতের ইঙ্গিত
সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সদ্য নিয়োগ পাওয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা সার্জিও গোর নয়াদিল্লিতে পৌঁছান।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মোদি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন—যা নতুন করে সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
বৈঠকের পর গোর বলেন,
“ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী মোদির সাম্প্রতিক ফোনালাপেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের বার্তা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।”
ট্রাম্পের প্রশংসায় মোদি
হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প মোদির প্রশংসা করে বলেন,
“জওহরলাল নেহরুর পর দীর্ঘতম সময় ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন মোদি। তিনি একজন মহান মানুষ—এবং তিনি ট্রাম্পকে ভালোবাসেন।”
তিনি আরও বলেন,
“আমি তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাই না। বহু বছর ধরে ভারতকে পর্যবেক্ষণ করছি—এটি অসাধারণ একটি দেশ। আগে প্রায় প্রতি বছরই সেখানে নতুন নেতা আসত, কিন্তু আমার বন্ধু এখন দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন।”
বাণিজ্য ও চাপের রাজনীতি
গত আগস্টে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত করে।
মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল কিনে ভারত পরোক্ষভাবে ইউক্রেনে যুদ্ধকে উৎসাহ দিচ্ছে।
ওয়াশিংটন এর মাধ্যমে নয়াদিল্লিকে ‘রুশ তেল নির্ভরতা’ থেকে দূরে রাখতে চায়—যার অংশ হিসেবেই ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে দেখা হচ্ছে।
ভারতের নীরব অবস্থান
এদিকে ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
কূটনৈতিক মহলের ধারণা, মোদি সরকার আপাতত নীরবতা বজায় রাখবে, কারণ দেশটি একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বাড়াতে চায়, আবার অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে পুরনো প্রতিরক্ষা নির্ভরতা থেকে সরে আসাও সহজ নয়।
বিশ্লেষকদের অভিমত
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা বিশ্ববাজারে তেলের নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
কারণ ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। রুশ তেল আমদানি কমলে বৈশ্বিক তেলের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
তবে এটি সত্যিই কার্যকর হয় কি না—তা নির্ভর করবে ভারতের বাস্তব পদক্ষেপ ও ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর।
