রাজবাড়ীর নজরুল ইসলাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত
রাজবাড়ীর রামকান্তপুর ইউনিয়নের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। পরিবার জানিয়েছে, দেশে আর্থিক অবস্থা ঠিক করার জন্য তিনি রাশিয়া গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে জোর করে সামরিক প্রশিক্ষণের পর যুদ্ধের জন্য পাঠানো হয়।
পরিবার জানায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেন-এর মাধ্যমে রাশিয়া যান নজরুল। প্রথম এক মাস পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, কিন্তু ৩০ এপ্রিল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। বুধবার (৮ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
নজরুল তার স্ত্রী আইরিন আক্তার-এর সঙ্গে শেষবার ৩০ এপ্রিল ফোনে কথা বলেছিলেন। ফোনে তিনি বলেছিলেন, “এখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব না, আল্লাহ তোমাকে দেখে রাখবে“। এরপর থেকে কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পারিবারিক অবস্থা ও আর্থিক ক্ষতি
নজরুলের স্ত্রী আইরিন আক্তার। তারা চার কন্যার পরিবার। বড় মেয়ে সম্প্রতি রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। ছোট দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ৬ ও ৫ বছর।
পরিবার জানিয়েছে, নজরুল সেনাবাহিনীতে ল্যান্স করপোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে সেনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবসরের পর ব্যবসা শুরু করলেও লোকসানজনিত কারণে আর্থিক সংকটে পড়েন। এই সুযোগে দালাল ফরিদ হোসেন তাকে রাশিয়ায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ১৩ লাখ টাকা নিয়ে পাঠান। সেখানে পৌঁছে জোর করে প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হয়।
আইরিন আক্তার বলেছেন, “আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন ছোট ছোট চারটি মেয়ে নিয়ে আমি কী করবো বুঝতে পারছি না।” পরিবার মরদেহ ফেরত আনার জন্য এবং দালাল ফরিদের শাস্তি চাচ্ছে।
নিহতের ভাই রহিম ও বোন নাছিমা বেগম বলেন, “দালাল ১৩ লাখ টাকা নিয়ে ভাইকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। আমরা চাই, দালালের কঠোর শাস্তি হোক।”
পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নজরুল একজন বন্ধুসুলভ ও ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ ছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর স্থানীয় বাজারে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কিন্তু লোকসানের কারণে আর্থিক সংকটে পড়েন।
