মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাকে পুনর্গঠনে এবং সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। বুধবার (স্থানীয় সময়) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা চাই গাজা আবারও বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ হোক। আমরা সাহায্য করব, আমরা শান্তির পক্ষে।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন ইসরাইল ও হামাস তাঁর মধ্যস্থতায় তৈরি হওয়া এক শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মতি জানিয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাসের উত্তেজনা ও রক্তক্ষয়ের পর এ চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক আশার আলো জ্বালিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে।
‘শান্তির পথেই এগোচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য’
ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমরা ইসরাইল ও হামাস উভয় পক্ষকেই আলোচনার টেবিলে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই সংলাপকে সফল করা এবং গাজাকে স্থায়ীভাবে শান্তিপূর্ণ রাখা।” তিনি আরও বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এটি শুধু ইসরাইল-ফিলিস্তিন নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।”
ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠনে অর্থনৈতিক সহায়তার পরিকল্পনা করেছে। এর অংশ হিসেবে মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা সুবিধা, শিক্ষা এবং পুনর্বাসন প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বাড়ানো হবে।
গাজার ধ্বংসস্তূপে পুনর্গঠনের আশা
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার টানাপোড়েনে গত এক দশকে গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। হাসপাতাল, স্কুল, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনেকগুলোই অচল হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, বর্তমানে গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ৭০ শতাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনর্গঠন সহায়তার ঘোষণা গাজার মানুষের মধ্যে এক নতুন প্রত্যাশা তৈরি করেছে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের জন্য এক বড় ইতিবাচক মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জাতিসংঘ মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, “যে কোনো উদ্যোগ যা সহিংসতা কমায় এবং পুনর্গঠন ত্বরান্বিত করে, তা প্রশংসনীয়।”
তবে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের আগের কিছু সিদ্ধান্ত—বিশেষ করে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া—ফিলিস্তিনিদের আস্থায় চিড় ধরিয়েছে। সেই আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে তারা মনে করছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক ড. জুলিয়া হ্যারিস বলেন, “গাজায় স্থায়ী শান্তি চাইলে শুধু সামরিক সংঘাতের অবসান নয়, মানবিক ও রাজনৈতিক সমাধান দুটিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যদি তা করতে পারে, তাহলে এই চুক্তি সত্যিই ঐতিহাসিক হয়ে উঠবে।”
ইসরাইল ও হামাসের প্রতিক্রিয়া
ইসরাইলি সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে চুক্তির শর্তগুলো ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত’ রাখার শর্তে মেনে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের রাজনৈতিক শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা গাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে চাই। যদি যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিকভাবে সাহায্য করে, আমরা শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠনের পথে যেতে প্রস্তুত।”
‘শান্তির যুগের সূচনা হতে পারে’
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে বহু দশকের সংঘাতের পর এমন ইতিবাচক সাড়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও এটি এখনো সূচনামাত্র, তবুও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গাজার পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
সাক্ষাৎকারের শেষাংশে ট্রাম্প বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমরা এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছি, যেখানে ঘৃণার বদলে সহযোগিতা, যুদ্ধের বদলে শান্তি সম্ভব। এটি কেবল গাজার জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই এক শুভ বার্তা।”
