রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনের সেনারা চালানো ২৫১টি ড্রোন তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূপাতিত করেছে। সোমবার স্থানীয় সময় ভোরে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায়। রুশ কর্মকর্তারা বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী গত রাতভর সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ড্রোন হামলার চেষ্টা করেছিল, তবে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সরকারি টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতিতে জানায়, “গত রাতে বিমান প্রতিরক্ষা সতর্কতা ব্যবস্থা ইউক্রেনের ২৫১টি ড্রোন হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে। সব ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগেই ভূপাতিত করা হয়েছে।”
তবে রাশিয়ার এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
রাতভর আকাশে উত্তেজনা
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, এই ড্রোন হামলার মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ব্রায়ানস্ক, বেলগোরদ ও কুরস্ক অঞ্চল। স্থানীয় বাসিন্দারা রাতভর আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে জানায় সংবাদ সংস্থা তাস। কিছু এলাকায় আগুন লাগার ঘটনাও ঘটে, যদিও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
রুশ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ফলে বড় কোনো অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে কিছু বেসামরিক ভবন ও বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
ইউক্রেনের পাল্টা অবস্থান
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় সামরিক সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়ার ভেতরে হামলার লক্ষ্য ছিল সামরিক সরঞ্জাম মজুত কেন্দ্র এবং জ্বালানি ডিপো। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের বাহিনী এখন আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করছে। রাশিয়া যদি আমাদের শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালায়, আমরা চুপ করে থাকব না।”
তবে ইউক্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অভ্যন্তরে কোনো হামলার দায় স্বীকার করেনি। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই ধরনের ড্রোন হামলা মূলত রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুদ্ধের নতুন মাত্রা
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাত এখন তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ড্রোন হামলা উভয় পক্ষের অস্ত্রাগারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গত এক বছরে ইউক্রেন ব্যাপকভাবে নিজস্ব ড্রোন প্রযুক্তি উন্নয়ন করেছে, যা রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে আকাশপথে সংঘাত বাড়ায় আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উভয় দেশকে সংযমের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাইকেল হফম্যান বলেন, “২৫১টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি যদি সত্য হয়, তবে এটি রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের প্রতিরক্ষা সাফল্য। তবে এত বড় আকারের আক্রমণ ইউক্রেনের সক্ষমতাকেও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে।”
রাশিয়ার পাল্টা হামলার প্রস্তুতি
রুশ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেনের ধারাবাহিক আক্রমণের জবাবে রাশিয়া শিগগিরই নতুন পাল্টা অভিযান শুরু করতে পারে। মস্কোর সামরিক সূত্রগুলো বলছে, ব্ল্যাক সি অঞ্চলে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর যৌথ মহড়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আগের চেয়ে শক্তিশালী। শত্রু যতই আক্রমণ করুক, আমরা প্রস্তুত।”
তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার হামলাতেই তাদের শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিয়েভের দাবি, তারা কেবল আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ও শান্তি সম্ভাবনা
পশ্চিমা দেশগুলো এখনো ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে সামরিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। অন্যদিকে, চীন ও ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ধারাবাহিক ড্রোন হামলা ও পাল্টা হামলা যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। শান্তি আলোচনার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা নতুন করে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিচ্ছেন।
