গাজা উপত্যকার সামুদ্রিক অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা “সুমুদ ফ্লোটিলা”র অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আটক ১৩৭ জনকে তুরস্কে পাঠিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার (৪ অক্টোবর) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্য, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, মরক্কো, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া ও তুরস্কসহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের মধ্যে ১৩৭ জনকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ জন তুর্কি নাগরিক বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই ১৩৭ জন গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার নামে এসেছিলেন। কিন্তু তাদের আচরণ, ইসরায়েল, ইতালি ও গ্রিসের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, এবং নৌযানগুলোতে বহন করা স্বল্প পরিমাণ সামগ্রী—সবকিছুই প্রমাণ করে তাদের উদ্দেশ্য ছিল মানবিক নয়, বরং হামাসের পক্ষে রাজনৈতিক উসকানি সৃষ্টি করা।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইসরায়েল যত দ্রুত সম্ভব এসব ‘প্ররোচনাকারী’ ব্যক্তিকে বহিষ্কার করতে চায়। তবে কয়েকজন আটক ব্যক্তি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে থাকতে চাচ্ছেন।”
এছাড়া ইসরায়েল দাবি করেছে, “কিছু বিদেশি সরকারও নিজেদের নাগরিকদের ফেরত নিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। তবুও ইসরায়েল এই তথাকথিত ‘মানবিক নাটকে’ অংশ নেওয়া সব ব্যক্তিকে ধাপে ধাপে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেবে।”
গাজা অবরোধ ও সুমুদ ফ্লোটিলার প্রেক্ষাপট
ইসরায়েল ২০০৭ সাল থেকে হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজা উপত্যকার ওপর স্থল, আকাশ ও সামুদ্রিক অবরোধ জারি রেখেছে। এই অবরোধের ফলে গাজার ভেতরে মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে—খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও নির্মাণ সামগ্রীর সরবরাহে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এর প্রতিবাদেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী, চিকিৎসক, সমাজকর্মী ও বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিয়ে “গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা” নামের নৌযান অভিযাত্রা গঠিত হয়। প্রায় ৪২টি জাহাজ নিয়ে তারা গাজামুখী “মানবিক মিশন” হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এতে যুক্ত ছিলেন ৪৭০ জনের বেশি কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক।
তবে যাত্রাপথে ইসরায়েলি নৌবাহিনী জাহাজগুলোর গতিপথ আটকে দেয় এবং অধিকাংশ কর্মীকে আটক করে। তাদের মধ্যে অনেককেই পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
তুরস্কের ভূমিকা ও প্রতিক্রিয়া
তুরস্ক ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১০ সালে গাজাগামী “মাভি মারমারা” ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হামলায় ১০ তুর্কি নাগরিক নিহত হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক দীর্ঘ সময়ের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমান ঘটনার পরও তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর যেকোনো প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তারা ইসরায়েলকে অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে এবং আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে বলেছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলছে, “গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ চলাকালে যেকোনো নৌযান প্রবেশই নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুমুদ ফ্লোটিলার এই ঘটনা আবারও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মানবিক সংকটকে আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
গাজায় ইসরায়েলি অভিযান ও অবরোধ অব্যাহত থাকায় আগামী সপ্তাহগুলোতে এ নিয়ে আরও কূটনৈতিক টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে।
