গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসানে নতুন এক সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শান্তি উদ্যোগ। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জানিয়েছে, তারা ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি ও গাজা যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে অবিলম্বে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে ইসরাইলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যা হামাস ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
শুক্রবার সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, হামাসের মুখপাত্র তাহের আল-নুনু বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজার ওপর ইসরাইলি বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান আমাদের জন্য উৎসাহজনক। হামাস বন্দী বিনিময়, যুদ্ধের সমাপ্তি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।”
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে ট্রাম্প যে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সমর্থন করেছেন। প্রস্তাব অনুযায়ী,
- ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর,
- বন্দীদের মুক্তি,
- গাজা থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, এবং
- হামাসের নিরস্ত্রীকরণ—এই চারটি ধাপের মধ্যে দিয়ে এগোবে শান্তি প্রক্রিয়া।
পরিকল্পনাটিতে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গাজার প্রশাসন একটি টেকনোক্র্যাটিক অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে। এই কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে, যিনি সমগ্র শান্তি প্রক্রিয়ার প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবেন।
যদিও প্রস্তাবের একটি অংশে বলা হয়েছে, “হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা রাখবে না,”—এই প্রসঙ্গে হামাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “ইসরাইল ‘ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ’ হিসেবে বন্দী বিনিময় বাস্তবায়নে প্রস্তুত।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা প্রেসিডেন্ট ও তার টিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। এই প্রচেষ্টা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি-দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”
গাজার জনমনে আশার সঞ্চার
এএফপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের প্রতিক্রিয়া ঘোষণার পর গাজার উপকূলীয় অঞ্চল আল-মাওয়াসি ও কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে আনন্দধ্বনি শোনা গেছে।
গাজা সিটির বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু হাতাব বলেন, “হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুনে আমরা আশাবাদী হয়েছি। মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টায় যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়, তাহলে গাজায় আমাদের দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটবে।”
‘একটি বিশেষ দিন’: ট্রাম্প
নিজের প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আজ একটি বিশেষ দিন। বহু বছর ধরে চলা এই সংঘাতের অবসানে আমরা ন্যায়সঙ্গত সমাধানের দিকে এগোচ্ছি। আলোচনায় জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হবে।”
ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে এই ঘোষণাটি এক নতুন আশার বার্তা বয়ে এনেছে। তবে অনেকে আশঙ্কা করছেন, বাস্তবায়নের পথে রাজনৈতিক জটিলতা ও পারস্পরিক অবিশ্বাস বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দীর্ঘ পথ বাকি
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন হলে গাজার ধ্বংসস্তূপে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে হামাসের রাজনৈতিক ভূমিকা এবং ইসরাইলের নিরাপত্তা শর্ত—এই দুটি বিষয়েই সবচেয়ে বড় মতভেদ থেকে যাবে।
তবুও, ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব ও হামাসের আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ—দুই পক্ষের দীর্ঘ সংঘাতের ইতিহাসে একটি সম্ভাবনাময় মোড় এনে দিয়েছে। গাজা ও ইসরাইল—উভয় ভূখণ্ডেই এখন একটাই প্রত্যাশা, “যুদ্ধ নয়, শান্তি।”
