গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা বহনকারী আন্তর্জাতিক নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ আটক করেছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “গাজার জনগণের প্রতি এই আচরণ কেবল মানবিকতার পরিপন্থী নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইসরাইলের এই পদক্ষেপ ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের নির্লজ্জ প্রকাশ। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং মানবিক আইনকে অগ্রাহ্য করার একটি নৃশংস দৃষ্টান্ত।”
অবিলম্বে মুক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আহ্বান
বাংলাদেশ সরকার আটক করা সকল মানবিক সহায়তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও শারীরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “এই মানবিক সহায়তা অভিযান কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়নি। এটি ছিল ক্ষুধার্ত, আহত ও অবরুদ্ধ গাজার মানুষের জন্য ন্যূনতম খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা। এমন উদ্যোগের ওপর হামলা চালানো সভ্যতার প্রতি চ্যালেঞ্জ।”
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের দাবি
বিবৃতিতে বাংলাদেশ আবারও ইসরাইলের প্রতি গাজা ও পশ্চিম তীরে অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে বলা হয়, “গাজায় চলমান গণহত্যা, মানবিক অবরোধ ও নির্বিচারে হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”
বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলমান এই দমননীতি কেবল মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকেই নয়, বরং বৈশ্বিক শান্তি প্রচেষ্টাকেও বিপন্ন করছে।
মানবিক সহায়তা আটকে ‘বিশ্বজনীন নৈতিকতার অপমান’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কোনো নির্দিষ্ট দেশের নয়; এটি বিশ্বব্যাপী মানবিক সংহতির প্রতীক। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানবিক কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এই মিশনে যুক্ত হয়েছেন। তাদের আটকে দেওয়া মানে মানবতার কণ্ঠরোধ করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে—
“ইসরাইলকে অবশ্যই গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অবাধ অনুমতি দিতে হবে। বর্তমানে দখলদার বাহিনী বেসামরিক জনগণকে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং ন্যূনতম জীবিকার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করছে। এই আচরণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।”
বাংলাদেশ–ফিলিস্তিন বন্ধুত্বের ঐতিহাসিক বন্ধন
বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার ঐতিহাসিকভাবেই ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পাশে রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনের জনগণ যেমন সংহতি জানিয়েছিল, তেমনি বাংলাদেশও ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সর্বদা সমর্থন করে আসছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “এই ভয়াবহ দুর্দশা ও অব্যাহত দুর্ভোগের মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণ ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে— ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হলো দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান
বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে— তারা যেন অবিলম্বে উদ্যোগ নিয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একক অবস্থান গ্রহণের। ইসরাইলের এই আচরণ মানবিকতার সব নীতি লঙ্ঘন করছে। মানবতা রক্ষায় বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। মানবিক সাহায্য আটকানোর মতো ঘটনা কেবল ফিলিস্তিন নয়, সমগ্র মানবসভ্যতার জন্য লজ্জাজনক। বাংলাদেশের এই কণ্ঠ তাই শুধু প্রতিবাদ নয়, এটি এক বৈশ্বিক মানবতার আহ্বান।
