সাতক্ষীরা সীমান্তে আবারও পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার তলুইগাছা সীমান্তের শূন্যরেখায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ আটক ১৫ বাংলাদেশিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।
কীভাবে আটক হন তারা
বিজিবির সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী হাকিমপুর চেকপোস্ট অতিক্রমের সময় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ১৫ বাংলাদেশিকে আটক করে বিএসএফ। অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করার পর ভারতের হাকিমপুর বিএসএফ ক্যাম্পে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে পতাকা বৈঠকের দিন নির্ধারণ করা হয়।
পতাকা বৈঠকের পরিবেশ
বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ওই পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন আমুদিয়া কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর বিকাশ কুমার। অপরদিকে বিজিবির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ৩৩ ব্যাটালিয়নের তলুইগাছা বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো. আবুল কাশেম। শূন্যরেখায় উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আটক বাংলাদেশিদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিজিবি জানায়, বৈঠকটি ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবেশে। এর মধ্য দিয়ে সীমান্ত এলাকায় দু’দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত কাজের দৃষ্টান্ত আরও একবার প্রকাশ পেল।
থানায় হস্তান্তর ও আইনি প্রক্রিয়া
হস্তান্তরের পর বিজিবি আটক ১৫ জনকে গ্রহণ করে সাতক্ষীরা সদর থানায় হস্তান্তর করে। এ সময় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় বলে জানান তলুইগাছা বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো. আবুল কাশেম। পুলিশের পক্ষ থেকে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ: একটি বড় সমস্যা
স্থানীয় সূত্র বলছে, সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবাসী শ্রমিক, দালাল ও নানা কারণে বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রায়ই ভারতে প্রবেশ করে থাকেন। কখনও কাজের সন্ধানে, কখনও আত্মীয়স্বজন দেখার জন্য—আবার কখনও দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সীমান্ত পাড়ি দেন তারা। অথচ বৈধ কাগজপত্র বা অনুমতি ছাড়াই এভাবে অনুপ্রবেশের কারণে তাদের আটক হওয়ার ঘটনা ঘটে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, সীমান্ত এলাকায় দালাল চক্রের সক্রিয়তার কারণে অনেক মানুষ অজান্তে অনিশ্চিত ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। শিশু ও নারীরাও এর শিকার হন। প্রবাসে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে দালালরা তাদের অবৈধভাবে ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করে থাকে।
সীমান্তে সচেতনতার প্রয়োজন
বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, জনগণকে সচেতন করতে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হয়। সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে স্থানীয়দের অবহিত করা হচ্ছে। বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।
অতীতের ঘটনা ও ভবিষ্যৎ করণীয়
সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে এর আগেও বহুবার বাংলাদেশিদের আটক করে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। অনেক সময় দীর্ঘদিন আটক থাকার পর ফেরত আসতে হয়েছে অনুপ্রবেশকারীদের। এ ধরনের ঘটনা কেবল মানবিক সংকটই তৈরি করে না, বরং দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনাও সৃষ্টি করে।
স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন, সীমান্তে নজরদারির পাশাপাশি দালাল চক্রকে আইনের আওতায় আনা জরুরি। একইসঙ্গে সীমান্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিতে বাধ্য না হয়।
তলুইগাছা সীমান্ত দিয়ে বিএসএফের হাতে আটক ১৫ বাংলাদেশিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত আসা কেবল একটি ঘটনা নয়; বরং সীমান্ত এলাকার দীর্ঘদিনের সমস্যার প্রতিফলন। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। বৈধ পথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং দালাল চক্রের দমনই পারে সীমান্তে অনুপ্রবেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ড কমাতে।
