ফ্রিডম ফ্লোটিলায় শহিদুল আলম: ২০১৮’র কারাগার থেকে ফিলিস্তিনের সাগর একই প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি
সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তার লড়াই অব্যাহত। এবার গাজার অবরোধ ভাঙার আন্তর্জাতিক মিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন এই আলোকচিত্রী।
গাজার পথে ফ্রিডম ফ্লোটিলায় বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট শহিদুল আলম।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে শহিদুল আলম শুধু একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী নন, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের নাম। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থনে কথা বলার ‘অপরাধে’ যাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল, আজ সেই শহিদুল আলম আবারও দাঁড়িয়েছেন ন্যায়ের পক্ষে, এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে—নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পাশে।
কে এই শহিদুল আলম?
শহিদুল আলম একজন বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী, লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী। তিনি দৃক পিকচার লাইব্রেরি এবং পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা। তার কাজের মাধ্যমে তিনি বরাবরই প্রান্তিক মানুষের কথা এবং সামাজিক অবিচারের চিত্র তুলে ধরেছেন, যা তাকে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত করেছে।
২০১৮ সালের সেই দুঃসহ স্মৃতি
অনেকেরই মনে আছে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা। সেই উত্তাল সময়ে শিক্ষার্থীদের সমর্থনে এবং সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দেন শহিদুল আলম। এর জের ধরে তৎকালীন সরকার তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) আইনে ‘উস্কানিমূলক মিথ্যা প্রচার’-এর অভিযোগ আনে।
তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় এবং সেই মামলায় তিনি ১০৭ দিন কারাভোগ করেন। অবশেষে, ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। সেই ঘটনাটি দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর একটি বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
আজ তিনি ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর
সেই শহিদুল আলম আজ আবারও মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ বা ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ নামক একটি আন্তর্জাতিক মানবিক উদ্যোগের অংশ হয়েছেন। এই ফ্লোটিলার লক্ষ্য হলো ইজরায়েলি অবরোধ ভেঙে সরাসরি গাজায় বসবাসরত নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
এই যাত্রায় যোগ দিয়ে শহিদুল আলম কেবল একজন ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং বাংলাদেশের সেই সকল মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন যারা ফিলিস্তিনের উপর চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে চায়। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, এই ফ্লোটিলা ফিলিস্তিনিদের মনে করিয়ে দেবে যে বিশ্ব তাদের ভুলে যায়নি।
আমাদের গর্ব, আমাদের প্রেরণা
দেশের ভেতরে সত্য কথা বলার জন্য যিনি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তিনিই আজ বৈশ্বিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পতাকা বহন করছেন। শহিদুল আলমের এই অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, ভৌগোলিক সীমানা সত্য ও ন্যায়ের লড়াইকে আটকে রাখতে পারে না। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের প্রেরণা। তার এই অদম্য সাহসিকতাকে মন থেকে স্যালুট।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited