বাংলাদেশে আগামী বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাজ্য। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এ বার্তা দেন।
বৈঠকের আলোচনার সারাংশ
সারাহ কুক জানান, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- জাতীয় নাগরিক শিক্ষা কর্মসূচি: গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ নাগরিক, বিশেষত তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধি।
- ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ: নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন।
- দুর্বল গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি: নারী, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিশেষ উদ্যোগ।
তিনি বলেন,
“যুক্তরাজ্য নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করছে। আমাদের অঙ্গীকার হলো— বাংলাদেশের জনগণ যেন একটি বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা পায়।”
অতীত ভূমিকা ও সহায়তা
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় যুক্তরাজ্য সবসময় সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে—
- ২০০৮ সালের নির্বাচন: আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিতে যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রকল্প: ইউএনডিপি’র সাথে অংশীদার হয়ে যুক্তরাজ্য ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
- নাগরিক সমাজ উদ্যোগে অর্থায়ন: গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিওকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক সহযোগিতা প্রমাণ করে যে যুক্তরাজ্য কেবল নির্বাচনের দিনে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক বার্তা
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্বাচনের প্রশ্নে উত্তেজনা বিদ্যমান। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের এই পুনর্ব্যক্ত সমর্থন তিনটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—
- আন্তর্জাতিক নজরদারি বাড়ছে
বৈশ্বিক শক্তিগুলো চাইছে নির্বাচন যেন সর্বজনগ্রাহ্য হয়। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ বাড়বে। - বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ওপর অর্থনৈতিক সম্পর্ক নির্ভরশীল
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। - নাগরিক শিক্ষা ও অন্তর্ভুক্তি গুরুত্ব পাচ্ছে
শুধু ভোটগ্রহণ নয়, বরং গণতান্ত্রিক চেতনা বিস্তারের দিকেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্ব দিচ্ছে।
সারাহ কুকের সরাসরি বার্তা
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
“আমি আবারও বলতে চাই— যুক্তরাজ্য আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করছে।”
উপসংহার
যুক্তরাজ্যের এই পুনর্ব্যক্ত অবস্থান বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক আস্থার পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে কেবলমাত্র প্রশাসনিক নয়, বরং রাজনৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আন্তর্জাতিক সহযোগীদের আস্থা হারালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
