ডেস্ক নিউজ ঃ
মেক্সিকোর যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের ৩ হাজার ১৪৫ কিলোমিটার বরাবর সামরিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা খুব বেশি আগের নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন এবং রাশিয়া উভয়ই মেক্সিকোতে তাদের বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে (বিশেষ করে খণিজ, শক্তি এবং প্রযুক্তিতে)। চীন ও রাশিয়া মেক্সিকোর প্রধান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য অংশীদার।
সুতরাং, কীভাবে ওয়াশিংটন এই দৃশ্যের প্রতিক্রিয়া জানাবে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত কিছুদিন আগে পত্রিকায় পাতায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা শিরোনাম ছাপানো হয়েছে। তা হলো—কিউবায় একটি গুপ্তচর ঘাঁটি স্থাপন করছে চীন। যদিও সমাজতান্ত্রিক কিউবা এই দাবি অস্বীকার করেছে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ১৯৯১ সাল থেকে রাশিয়া বেশ কয়েকটি দেশে আক্রমণ করেছে। যেমন—হাঙ্গেরি (১৯৫৬), চেকোস্লোভাকিয়া (১৯৬৮) এবং আফগানিস্তান (১৯৭৯), জর্জিয়া (২০০৮) এবং ইউক্রেন (২০১৪ এবং ২০২২)। সিরিয়াসহ (২০১৫) অন্যান্য দেশগুলোতে ঘৃণ্য ভূমিকা পালন করেছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধ বাধিয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তনের কাজটি করেছে।
মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে মার্কিন সমর্থক বা বন্ধুত্বপূর্ণ শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং তার বন্ধু নয় এমন সরকারের পতন ঘটানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তালিকায় আছে—আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, গুয়াতেমালা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, নিকারাগুয়া, পানামা এবং আরো অনেক দেশ। ১৯৫০ সালে পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত কিউবার পঞ্চম-সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল। এরপর মার্কিন অবরোধে কিউবার অর্থনীতিতে ধস নামে। এটি একটি কার্যকর উদাহরণ যে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব বিস্তার করতে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়।
আরো একটি চরম উদাহরণ হতে পারে হাওয়াই। এখানে শিল্পমুক্তকরণ এবং ভাষাগত বিলুপ্তিতে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পরে এটি আমেরিকার ৫০তম রাজ্যে পরিণত হয়েছিল (২১ আগস্ট, ১৯৫৯)। স্থানীয় জনসংখ্যার সবচেয়ে কার্যকরী পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে এবং এর সংগঠিত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। অথচ হোয়াইট হাউজের আগে হাওয়াইয়ের ইওলানি প্রাসাদে বৈদ্যুতিক আলো ছিল। মার্কিন উপনিবেশের আগে হাওয়াই ছিল বিদ্যুত্, গণপরিবহণ, রেলপথের দিক থেকে উন্নত এবং স্বাক্ষরতার হারও ছিল সর্বোচ্চ।
৮০টিরও বেশি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫০টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। অর্থাত্ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এর গোলার্ধের বাইরেও বিস্তৃত। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরেও নজর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গঠন করা হয়েছে কোয়াড। আরো আছে অকাস ও জাফাস (জাপান, ফিলিপাইন ও ইউএসের সমন্বয়ে গঠিত)। এর মাধ্যমে চীনকে মোকাবিলা করাই উদ্দেশ্য। আবার চীন ও রাশিয়া ব্রিকসের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বকে জবাব দিতে চায়। চীন ক্রমেই তার প্রভাববিস্তারের জন্য কাজ করে চলছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এখন চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে সম্পর্ক। এসব নানা কৌশলের মধ্যেই সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
কিসিঞ্জার কেন চীনে গিয়েছিলেন : মার্কিন সংবাদ মাধ্যম পলিটিকোতে এই সফর নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন, অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক দূত জন কেরি সফর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মধ্যে যোগাযোগ না থাকলে বড় ধরনের ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই ভুলের খেসারত বিশ্বকেই দিতে হবে। তাই চীনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতেই এসব সফরের আয়োজন করা হয়েছে। তবে তাদের সফরে সম্পর্ক উষ্ণ হয়েছে সেটা বলা যাবে না। কারণ প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাক্ষাত্ করেননি। দুই দেশের সামরিক যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি নিয়েও কোনো সুখবর আসেনি। আবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এদের মধ্যে কেবল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গেই সাক্ষাত্ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকদের সফর যতটা না আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি আলোচনা সৃষ্টি করেছে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১০০ বছর বয়সি হেনরি কিসিঞ্জারের চীন সফর। চীন যে সব মার্কিনির প্রতি সন্তুষ্ট নয়, তা কিসিঞ্জারের সফরে দেখা গেছে।
সরকারের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা না হলেও তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে বেইজিং। তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে রাখা হয়েছে, যেখানে খুব কম নেতাদেরকেই দেখা যায়। কিসিঞ্জারকে ‘পুরোনো বন্ধু’ বলেও উল্লেখ করেছেন শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, চীন কখনো তার পুরোনো বন্ধুকে ভোলে না। শি আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক সবসময় কিসিঞ্জারের মাধ্যমেই হবে। কিসিঞ্জার শীর্ষ চীনা কূটনীতিক ওয়াং ই, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফুর সঙ্গেও দেখা করেছেন। বিবিসি জানিয়েছে, কিসিঞ্জার হয়তো ব্যাকচ্যানেলে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে দিতে সহায়তা করতে পারে। তার দুই দেশেই কদর রয়েছে।
চীন ও আমেরিকার মধ্যে ১৯৭১ সালে সরকারিভাবে কোনো কূটনৈতিক যোগাযোগ যখন ছিল না, তখন মি. কিসিঞ্জার গোপনে বেইজিং সফরে যান তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফরের ব্যবস্থা করার লক্ষ্য নিয়ে। পরের বছর নিক্সন চীনের মাটিতে নামেন এবং মাও জেদংসহ চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্য দিয়ে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পথ প্রশস্ত হয় এবং চীনের জন্য বিশ্বের দরোজা খুলে যায়। এরপর থেকে কিসিঞ্জারকে শতাধিক বার চীনে স্বাগত জানানো হয়েছে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited