শরীরে বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা-বেদনা বেড়ে গেলে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেল না তো! ইউরিক অ্যাসিডের নাম ব্যথার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত বলে আমরা কমবেশি অনেকেই জানি। এটি মূলত অক্সিজেন, নাইট্রোজেন আর কার্বন–গঠিত একটি যৌগিক পদার্থ, যা আমাদের শরীরের এক ধরনের বর্জ্য পদার্থ বলা যেতে পারে। আমাদের শরীরে আছে দুই ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, এর মধ্যে কিছু আবশ্যিক বা অ্যাসেনশিয়াল, আর কিছু অনাবশ্যিক বা নন–অ্যাসেনশিয়াল। পিউরিন হচ্ছে এমনই একটা অনাবশ্যিক অ্যামাইনো অ্যাসিড। আমাদের শরীরের বেশির ভাগ ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয় এই পিউরিন থেকেই। আর কিছু পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড আসে খাবারের মধ্যে থাকা পিউরিন থেকে। ইউরিক অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়ে যায়।
আমাদের শরীরে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রে ২.৪ থেকে ৭, এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ২.৪ থেকে ৬ মিলিগ্রাম ইউরিক অ্যাসিড প্রতি ডেসিলিটারে থাকাটা স্বাভাবিক। এর চেয়ে মাত্রা বেড়ে গেলে তাকে বলে হাইপার ইউরেসিমিয়া। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক জমে সেখানে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে করে শরীরের নানা জয়েন্টে মারাত্মক ব্যথা, লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডের কারণে কিডনির পাথরজনিত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। আছে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ভয়ও। এমনিতে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চমাত্রার সঙ্গে আরও কিছু রোগের সহাবস্থান দেখা যায়। যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা ইত্যাদি। কখনো কখনো ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলেও তা তেমনভাবে জানান দেয় না। অর্থাৎ তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চমাত্রার কারণ আছে অনেকগুলো। যাঁরা শাকসবজি কম খান বা প্রোটিন–জাতীয় খাবার বেশি খান, অ্যালকোহল খান, পানি কম খান, যাঁদের ওজন বেশি, বংশে বাত রোগের ইতিহাস আছে, তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে। আবার কিছু ওষুধের সঙ্গেও ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। যেমন ডাইইউরেটিক–জাতীয় ওষুধ। অনেক ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন কোনো কারণ ছাড়াও এমনটা হতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড যেহেতু শরীরে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি। আর এ জন্য দরকার খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণ। যেসব খাবার খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে, সেগুলো হলো চতুষ্পদ প্রাণী যেমন গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদির মাংস, কলিজা, জিহ্বা, মগজ ইত্যাদি। চিংড়ি, কাঁকড়া–জাতীয় খোসাসহ মাছ। বীজ–জাতীয় খাবার, যেমন শিমের বিচি, মটর, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি। এ ছাড়া আছে ক্যাফেইন–জাতীয় পানীয় যেমন চা, কফি। অ্যালকোহল। কিছু বিশেষ সবজি, যেমন পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, ব্রকলি, ঢ্যাঁড়স, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো। ইস্ট দেওয়া খাবার, মিষ্টি ফল ইত্যাদি।
অতএব, ইউরিক অ্যাসিডজনিত সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে খাবারদাবারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। ছোট মাছ, মুরগি, আঁশযুক্ত সবুজ শাকসবজি, পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে। চা, কফি, অ্যালকোহল–জাতীয় পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের কোলেস্টেরল বা সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখাও জরুরি। এ ছাড়া ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমানোর জন্য কিছু ওষুধ আছে, যা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে গ্রহণ করা যায়। যেহেতু ইউরিক অ্যাসিড উচ্চমাত্রায় থাকলেও সব সময় এর লক্ষণ নাও থাকতে পারে, তাই বছরে অন্তত একবার হলেও রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরিমাপ করা প্রয়োজন।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited