দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনও পুরোপুরি না কমলেও আশার খবর হলো—গত ২৪ ঘণ্টায় এ রোগে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে একই সময়ে নতুন করে আরও ৬৫১ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার (১ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় থাকলেও আক্রান্তের হার এখনো উল্লেখযোগ্য।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যা ঢাকায়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২০ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১১৭ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সিটি করপোরেশনের বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে ১২০ জন, বরিশাল বিভাগে ১২৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ২২ জন, খুলনা বিভাগে ১৩ জন এবং সিলেট বিভাগে তিনজন নতুনভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অন্যদিকে, একই সময়ে সারাদেশে ৬৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর মোট ৬৭ হাজার ৪৫৯ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এ বছর এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ৫১৩ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৮ জনে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে সারাদেশে মোট এক লাখ দুই হাজার ২১৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলক কিছুটা কম হলেও, আশঙ্কা পুরোপুরি কেটে যায়নি। আবহাওয়ার তারতম্য, বৃষ্টিপাতের অনিয়ম ও নগর এলাকায় পানি নিষ্কাশনের দুর্বল ব্যবস্থার কারণে এখনো মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রুবিনা আক্তার বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নাগরিক সচেতনতা। বাড়ির আশপাশে তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকলে সেটি পরিষ্কার করা জরুরি। পাশাপাশি, জ্বর হলে নিজে ওষুধ না খেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত শয্যা ও চিকিৎসা সুবিধা রাখা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড ও পর্যবেক্ষণ ইউনিটও চালু আছে।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, আগের মাসগুলোর তুলনায় রোগীর চাপ কিছুটা কমলেও শিশু ও বয়স্ক রোগীদের সংখ্যা এখনও উদ্বেগজনক। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক রোগী সময়মতো পরীক্ষা না করায় জটিলতা বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগাম সতর্কতা এবং স্থানীয় সরকারের ধারাবাহিক পদক্ষেপ থাকলে ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ করে মশার প্রজনন মৌসুমের আগে সচেতনতা ও ফগিং কার্যক্রম জোরদার করা হলে এই রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
সবশেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনগণকে পরামর্শ দিয়েছে—যে কোনো ধরনের জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এবং বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited