ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নতুন করে আরও ৫০৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার (১ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। বিভাগভিত্তিক হিসেবে দেখা যায়—বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯১ জন, ঢাকা বিভাগের জেলা পর্যায়ে ২১৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১০৮ জন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ছাড়পত্র ও মোট আক্রান্তের চিত্র
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ হাজার ৫৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে চলতি বছরে মোট ৬৬ হাজার ৮০২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এ বছর দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬৯ হাজার ৮৬২ জন। তাদের মধ্যে ৬৫ দশমিক দুই শতাংশ পুরুষ এবং ৩৪ দশমিক আট শতাংশ নারী।
মৃত্যু না হলেও সতর্কতা অব্যাহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন করে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ভাইরাসজনিত এই রোগে মোট ২৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের আগে অক্টোবর-নভেম্বর মাসেও ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়। তাই তারা সাধারণ মানুষকে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
গত বছরের পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়াবহ
২০২৪ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মারা যান ৫৭৫ জন রোগী। তুলনামূলকভাবে ২০২৫ সালে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কিছুটা কমলেও রোগের বিস্তার এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন, অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অকার্যকর মশা নিধন কর্মসূচিই মূলত ডেঙ্গুর স্থায়ী ঝুঁকি তৈরি করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আহ্বান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য আলাদা ওয়ার্ড ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে নিয়মিত ফগিং, লার্ভা ধ্বংস অভিযান ও সচেতনতা কর্মসূচি জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,
“ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো উৎসে মশার প্রজনন রোধ করা। প্রতিটি নাগরিকের ঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা এখন সময়ের দাবি।”
সচেতনতার ওপর জোর
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বাড়ির ছাদে, ফুলের টবে, জমে থাকা পানিতে বা এসির নিচে মশার লার্ভা দ্রুত জন্ম নেয়। তাই সপ্তাহে অন্তত এক দিন ‘পরিষ্কার দিবস’ পালন করা উচিত, যাতে এসব স্থানে পানি জমে না থাকে।
এছাড়া সকালে ও বিকেলে মশা বেশি সক্রিয় থাকায় এই সময় পূর্ণহাতা জামা-প্যান্ট পরা, মশারি ব্যবহার, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা ও মশারোধী ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহেও ডেঙ্গু সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে ডিসেম্বর থেকে আবহাওয়া ঠান্ডা হলে মশার সক্রিয়তা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নগর এলাকায় সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা না বাড়লে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যেতে পারে।

 
			 
			
 










 সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited
সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited