সারা দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় এ রোগে আরও ছয়জনের প্রাণ গেছে, একই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৮৩ জন। সোমবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৯ জনে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও অপর্যাপ্ত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের কারণে বছরের শেষভাগেও সংক্রমণ বিস্তারের আশঙ্কা রয়ে গেছে।
রাজধানীতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ, তবে বিভাগীয় শহরে বাড়ছে আক্রান্ত
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া ৯৮৩ জনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ২২৭ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩৩ জন রোগী রয়েছেন। অর্থাৎ রাজধানীতে মোট ৩৬০ জন নতুনভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তবে রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে। ঢাকা বিভাগের সিটি করপোরেশনের বাইরে নতুন ভর্তি ১৭১ জন। বরিশাল বিভাগে ১৪১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১১ জন, খুলনা বিভাগে ৬২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১ জন, রাজশাহীতে ২৯ জন, রংপুরে ২৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ২১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে সচেতনতা ও নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রমের কারণে আক্রান্তের হার কিছুটা কমলেও এখন সংক্রমণ ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের জেলা শহরগুলোতে প্রতিদিন নতুন রোগী বাড়ছে।
সুস্থ হয়েছেন ৯৭০ জন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৪১৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। তবে এখনও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন কয়েক হাজার রোগী।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুষ্ক মৌসুমে প্রবেশের আগেও যেহেতু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তাই নভেম্বরেও সতর্ক থাকতে হবে। তারা বলছেন, “অনেকেই ভেবে নিচ্ছেন বর্ষা শেষ মানেই ডেঙ্গু কমে যাবে, কিন্তু জলবদ্ধতা ও আবর্জনার স্তূপে থাকা জমে থাকা পানিতেই এডিস মশার প্রজনন অব্যাহত থাকে।”
বাড়ছে হাসপাতালের চাপ
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগীর চাপ এখনও কমেনি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা ছাড়াও করিডর ও ফ্লোরে রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক রোগী জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন, যা মৃত্যুহার বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “অনেক রোগী প্রাথমিক জ্বরকে সাধারণ ভাইরাল মনে করে ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেরিতে আসায় জটিলতা দেখা দিচ্ছে—বিশেষ করে লো প্লেটলেট ও শক সিন্ড্রোমের কারণে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।”
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় উদ্যোগ জরুরি
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে শুধু হাসপাতালনির্ভর পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ধারাবাহিক মশা নিধন ও সচেতনতা কর্মসূচি। নগরবাসীকে নিয়মিত নিজের বাসা ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি সরানো এবং ফুলের টব বা পরিত্যক্ত পাত্রে পানি না রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র জানান, “আমরা প্রতিদিন মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। বর্তমানে আক্রান্তের হার কিছুটা স্থিতিশীল, তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।”
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু—দুটিই আগের বছরের তুলনায় বেশি। যদিও রাজধানীতে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, তবে বিভাগীয় শহর ও উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আশঙ্কা রয়ে গেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সম্মিলিত পদক্ষেপ না নিলে এই প্রবণতা নভেম্বরেও চলতে পারে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited