বাংলাদেশে চলমান টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যেই দেশের ১ কোটি ৭০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ১২ অক্টোবর, যা আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই তথ্য জানানো হয়। সভার আয়োজন করে এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন (ইপিআই), ইউনিসেফ বাংলাদেশ এবং হেলথ প্রোটেকশন ফাউন্ডেশন। সভায় উপস্থিত ছিলেন সরকার, উন্নয়ন সংস্থা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইপিআই ও সার্ভেইলেন্সের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ। তিনি জানান, “টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা শিশুদের একটি বড় অংশকে জীবন-হানিকর রোগের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত করতে পারছি। এটি দেশের সার্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির একটি ঐতিহাসিক অর্জন।”
ডা. শাহরিয়ার জানান, বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে এক ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আওতায় মাদ্রাসা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ প্লে, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাও এই ক্যাম্পেইনের আওতায় আসবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার টিকাদান কর্মসূচিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। টাইফয়েড টিকা সংযোজনের মাধ্যমে দেশের শিশুস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছি।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ দপিকা শর্মা।
দপিকা শর্মা বলেন, “বাংলাদেশ টিকাদান কর্মসূচিতে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। টাইফয়েড টিকাদান অভিযানের মাধ্যমে আমরা শিশুর জীবনরক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছি। ইউনিসেফ সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।”
সভায় উপস্থাপিত তথ্যে বলা হয়, দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। ২০২১ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ওই বছরে ৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে মারা গেছেন, যার মধ্যে প্রায় ৬ হাজারই ১৫ বছরের নিচে। দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারই এ রোগের প্রধান কারণ বলে জানানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, টাইফয়েড প্রতিরোধে শুধু টিকা নয়, পরিষ্কার পানি, স্যানিটেশন ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও জোর দিতে হবে। তারা মনে করেন, নগর ও গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতা বাড়ালে রোগের বিস্তার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
সভায় আরও জানানো হয়, টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন জেলায় অভিভাবকদের উৎসাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিদ্যালয়ভিত্তিক টিকাদান ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও সন্তোষজনক।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু টিকা দেওয়া নয়, বরং এমন একটি টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে শিশুরা নিরাপদ ও রোগমুক্তভাবে বেড়ে উঠবে। এই কর্মসূচি সেই লক্ষ্যপূরণেরই অংশ।”
সভায় বক্তারা স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তারা বলেন, দেশের প্রতিটি শিশুকে টিকাদানের আওতায় আনতে এই সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সবশেষে বক্তারা বলেন, “টাইফয়েড টিকাদান কেবল একটি স্বাস্থ্য অভিযান নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগ।”










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited