ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, চলতি বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়েছে। বিশেষত বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কয়েকগুণ বেশি।
সম্প্রতি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইমার ঘটনা তা-ই মনে করিয়ে দেয়। প্রথমে সাধারণ জ্বর ভেবে চিকিৎসা করা হলেও রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে, সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। চিকিৎসা শেষে বর্তমানে সে সুস্থ। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুতে দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা না নিলে জটিলতা বাড়তে পারে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, দেশে ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে চারটি বড় কারণ রয়েছে—
১) মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকা,
২) পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি,
৩) ভিন্ন ধরনের ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি,
৪) এবং অসময়ের বৃষ্টিপাত।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর চার ধরন (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪) প্রচলিত। চিকিৎসকদের মতে, দ্বিতীয়বার বা নতুন ধরনে আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে। বিশেষত ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লে প্রান্তিক পর্যায়ে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ সেখানে মশা নিধনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো খুব দুর্বল।
ডেঙ্গুর লক্ষণ
ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত জ্বর সাধারণত ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। সঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা ও ত্বকে লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা ও করণীয়
ডেঙ্গু জ্বরের তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় বাড়িতে বিশ্রাম যথেষ্ট হলেও গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস
ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার জরুরি। পাশাপাশি প্রচুর পানি, ওআরএস, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস ও দুধ জাতীয় তরল পানীয় খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
ঝুঁকিপূর্ণ রোগী
এক বছরের কম বয়সী শিশু, প্রবীণ (৬৫ বছরের বেশি), গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা নিয়মিত ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের শুরু থেকেই হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রতিরোধই মূল উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাগ্রে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। ঘর-বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি সরানো এবং মশার লার্ভা ধ্বংস করা জরুরি। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন করে প্রতিরোধ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মনে রাখতে হবে—“প্রতিরোধই চিকিৎসার চেয়ে উত্তম।”
