যৌনতার সময় কেন অনেক নারী শুধু শুয়ে থাকে: কারণ, প্রভাব ও সমাধান
প্রতিবেদন: NRD NEWS
যৌন সম্পর্ককে অনেক সময় শুধু শারীরিক সুখ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক পুরুষের অভিযোগ থাকে, তাদের স্ত্রী বা সঙ্গিনী মিলনের সময় নিষ্ক্রিয় থাকে, কিছুই করে না, শুধু শুয়ে থাকে। প্রশ্ন জাগে, কেন এমনটা হয়? এটি কি সত্যিই অনাগ্রহ, নাকি এর পেছনে রয়েছে গভীর সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক কারণ?
বাস্তব অভিজ্ঞতা: নীলার কাহিনি
নীলা (ছদ্মনাম), বয়স ২৯। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই তার স্বামী অভিযোগ করতে শুরু করেন, “তুমি মিলনের সময় কিছুই করো না, শুধু শুয়ে থাকো।” নীলা ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতেন না।
সমাজ, পরিবার কিংবা শিক্ষা জীবনের কোথাও তাকে শেখানো হয়নি যৌন সম্পর্ক আসলে কেমন হওয়া উচিত। তার মনে ভয় কাজ করত, শরীর নিয়ে অস্বস্তি থাকত। ফলে তিনি কেবল নীরব থেকে শুয়ে থাকাকেই নিরাপদ মনে করতেন।
কেন অনেক নারী নিষ্ক্রিয় থাকে
১. সামাজিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি
বাংলাদেশের মতো সমাজে মেয়েদের ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় লজ্জাশীল হতে, চুপচাপ থাকতে। যৌনতা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা ট্যাবু বলে গণ্য হয়। ফলে নারীরা যৌন সম্পর্কে সক্রিয় হওয়ার সাহস পান না।
২. প্রথম অভিজ্ঞতার ভয়
প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা অনেক নারীর কাছে কষ্টদায়ক হতে পারে। শারীরিক ব্যথা বা মানসিক ভয় থেকে তারা ভাবেন সক্রিয় হলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই তারা শুধু শুয়ে থাকেন।
৩. মানসিক স্বস্তি ও আস্থার অভাব
যদি সঙ্গীর প্রতি পূর্ণ আস্থা না থাকে তবে নারী সক্রিয় হতে পারেন না। অনেক সময় সম্পর্ক যদি একতরফা মনে হয়, তবে তার কাছে যৌনতা হয়ে দাঁড়ায় শুধু দায়িত্ব পালন।
৪. শরীর নিয়ে সংকোচ
অনেক নারী নিজের শরীরকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করেন। তারা ভাবেন, স্বামী হয়তো তাদের শরীর নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করবেন। আত্মবিশ্বাসের অভাব তাদের নিষ্ক্রিয় করে তোলে।
৫. পুরুষের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ
অনেক পুরুষ যৌন সম্পর্কে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চান। এতে নারী মনে করেন তার কিছু করার নেই। শুধু শুয়ে থাকলেই যথেষ্ট।
৬. আনন্দ না পাওয়া
যদি নারী শারীরিক ও মানসিকভাবে আনন্দ না পান তবে তিনি সক্রিয় হবেন না। বিশ্বব্যাপী জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ নারী নিয়মিত অর্গাজমে পৌঁছান না। ফলে তাদের কাছে যৌনতা হয়ে দাঁড়ায় কেবল সহ্য করার ব্যাপার।
প্রভাব
সম্পর্কে দূরত্ব
স্বামী ভাবতে পারেন স্ত্রী আগ্রহী নন। স্ত্রী মনে করতে পারেন যৌনতা শুধুই দায়িত্ব। এতে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি
পুরুষ মনে করতে পারেন তিনি যথেষ্ট নন। নারীও ভাবতে পারেন তিনি অস্বাভাবিক।
নীরবতা ও ট্যাবু
যৌন শিক্ষা না থাকার কারণে সমস্যা থেকে যায়। আলোচনা না হওয়ায় সমাধানও আসে না।
সমাধান
১. খোলামেলা যোগাযোগ
স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে খোলামেলা কথা বলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরকে জিজ্ঞেস করা উচিত কীভাবে আরাম পাওয়া যায়।
২. যৌন শিক্ষা
যৌনতা কেবল পুরুষের আনন্দের বিষয় নয়। নারী–পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণ দরকার। স্কুল–কলেজ থেকেই স্বাস্থ্য শিক্ষা জরুরি।
৩. মানসিক নিরাপত্তা
নারীদের বোঝাতে হবে তারা সম্মানিত ও মূল্যবান। মানসিক নিরাপত্তা তাদের সক্রিয় করে তুলতে পারে।
৪. ধৈর্য ও সময় দেওয়া
নারীরা ধীরে উত্তেজিত হন। পর্যাপ্ত সময়, ফোরপ্লে ও স্নেহ প্রদর্শন তাদের অংশগ্রহণ বাড়ায়।
৫. শরীরের প্রতি আস্থা তৈরি
নারীদের উৎসাহ দিতে হবে যাতে তারা নিজেদের শরীরকে ভালোবাসতে শেখেন। স্বামীর প্রশংসা ও সমর্থন এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
মনোবিদরা বলেন, নারীর নিষ্ক্রিয়তা কোনো অসুখ নয়। এটি সমাজ ও মানসিক চাপের ফল। স্বামী যদি সহায়তা করেন তবে নারী ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠবেন।
একজন গাইনোকোলজিস্ট বলেন, “নারীরা যখন যৌন সম্পর্কে আনন্দ পান না তখন তারা শুধু শুয়ে থাকেন। আনন্দ নিশ্চিত করতে হলে সময় দিতে হবে এবং সঙ্গীর প্রতি যত্নশীল হতে হবে।”
উপসংহার
যৌনতার সময় কেন অনেক নারী শুধু শুয়ে থাকে, এর একক কোনো উত্তর নেই। সামাজিক শিক্ষা, মানসিক ভয়, শারীরিক সংকোচ এবং সম্পর্কের ডায়নামিক্স সব মিলিয়েই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। সমস্যাটিকে দোষারোপ না করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
খোলামেলা আলোচনা, পারস্পরিক আস্থা এবং সঠিক শিক্ষা থাকলে নারী–পুরুষ দুজনেই একটি পরিপূর্ণ ও আনন্দময় যৌন জীবন উপভোগ করতে পারবেন।
