বিয়ের আগে দীর্ঘ সময় থাকা আর বিয়ের পরে দ্রুত বীর্যপাতের কারণ
প্রতিবেদন: NRD NEWS
যৌনতা শুধু শারীরিক আনন্দের জায়গা নয়, এটি দাম্পত্য সম্পর্কের মানসিক বন্ধনেরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু অনেক পুরুষ বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারলেও বিয়ের পরে হঠাৎ দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। এই পরিবর্তন শুধু শারীরিক নয়, বরং মানসিক ও সামাজিক প্রভাবও ফেলে। আজ আমরা একটি বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে এই সমস্যার কারণ, প্রভাব এবং সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাস্তব অভিজ্ঞতা: আরিফের গল্প
আরিফ (ছদ্মনাম), বয়স ৩৪। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেমের সম্পর্কে তিনি একাধিকবার ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। সেই সময় তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, সহজেই ২০ মিনিটের বেশি যৌন মিলন ধরে রাখতে পারতেন। তার কাছে এটা ছিল পুরুষত্বের গর্বের জায়গা।
কিন্তু বিয়ের পর কাহিনি বদলে যায়। প্রথম কয়েক মাস সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও ধীরে ধীরে তিনি লক্ষ্য করলেন যে মিলনের সময় কয়েক মিনিটের মধ্যেই বীর্যপাত হয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী প্রথমে বিষয়টিকে হালকা করে নিলেও পরে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে শুরু করেন। আরিফ নিজেকে ব্যর্থ ভাবতে শুরু করেন।
এই অবস্থার ফলে দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। আরিফ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, মানসিক চাপ আরও বেড়ে যায়। অবশেষে তিনি চিকিৎসকের কাছে যান এবং জানতে পারেন এটি প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত, যা বিশ্বের লাখো পুরুষের মধ্যে ঘটে।
কেন ঘটে এই পরিবর্তন?
মানসিক চাপ ও দায়িত্ব
বিয়ের আগে সম্পর্ক ছিল অনেকটা উত্তেজনা ও গোপনীয়তার মধ্যে। বিয়ের পরে সংসার, অর্থনৈতিক চাপ, পারিবারিক দায়িত্ব এসব মানসিক টেনশন বাড়ায়। এই টেনশন সরাসরি যৌন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।
নতুনত্ব হারানো
প্রেমকালে সম্পর্ক ছিল অজানার রহস্যে ভরা। বিয়ের পরে সম্পর্ক রুটিনে পরিণত হওয়ায় উত্তেজনা কিছুটা কমে যায়।
শারীরিক কারণ
বয়স বাড়ার সঙ্গে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে পারে। অনিয়মিত জীবনযাপন, ধূমপান, স্থূলতা ইত্যাদি যৌন ক্ষমতা কমায়।
ভয় ও প্রত্যাশা
অনেক সময় পুরুষ মনে করেন, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে তিনি ব্যর্থ। এই ভীতি শরীরকে অতিরিক্ত সংবেদনশীল করে তোলে, ফলে দ্রুত বীর্যপাত হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা
ডাক্তাররা এটিকে প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা Premature Ejaculation বলেন। এটি যৌন সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ একটি। প্রায় ৩০–৪০% পুরুষ জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এ সমস্যায় ভোগেন।
প্রভাব: ব্যক্তিগত ও সামাজিক
ব্যক্তিগত প্রভাব
পুরুষ নিজেকে অপমানিত ভাবতে পারেন
আত্মবিশ্বাস কমে যায়
দাম্পত্য জীবনে প্রভাব
স্ত্রীর অসন্তুষ্টি সম্পর্ককে নড়বড়ে করে তোলে
মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়
সামাজিক প্রভাব
যেহেতু বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা হয় না, তাই অনেক দম্পতির মধ্যে নীরব অশান্তি তৈরি হয়
উপায় ও সমাধান
খোলামেলা যোগাযোগ
স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে আলোচনা না হলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা প্রথম ধাপ।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
ধূমপান, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত ঘুম যৌন ক্ষমতা বাড়ায়
মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা
মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট মানসিক চাপ কমায়
কাউন্সেলরের কাছে যাওয়া অনেক সময় কার্যকর হয়
চিকিৎসা ও থেরাপি
বর্তমানে ওষুধ, স্প্রে ও থেরাপি ব্যবহার করা হয়
স্টপ-স্টার্ট এবং স্কুইজ টেকনিক ডাক্তাররা শিখিয়ে দেন, যা সময় নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
সামাজিক সচেতনতা
যৌন স্বাস্থ্যকে ট্যাবু মনে না করে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। স্কুল–কলেজ পর্যায় থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা শুরু হওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকার একজন ইউরোলজিস্ট জানালেন, “প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন একটি সাধারণ সমস্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি মানসিক চাপ ও জীবনযাত্রার সঙ্গে যুক্ত। চিকিৎসা, কাউন্সেলিং এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে সহজেই সমাধান সম্ভব।”
মনোবিদরা বলেন, “স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে খোলামেলা আলোচনা না হলে সমস্যাটি আরও বেড়ে যায়। তাই প্রথমে মানসিক দেয়াল ভাঙতে হবে।”
উপসংহার
আরিফের গল্প কেবল একজন মানুষের নয়, এটি হাজারো দম্পতির অভিজ্ঞতা। বিয়ের আগে দীর্ঘ সময় মিলন করতে পারলেও বিয়ের পরে দ্রুত বীর্যপাত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এর পেছনে রয়েছে মানসিক চাপ, দায়িত্ব, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং মাঝে মাঝে শারীরিক কারণ।
সমস্যাটিকে লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া, সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা সমাজে প্রচলিত ট্যাবু ভাঙতে সাহায্য করবে।
