সৌন্দর্যের মানদণ্ডে নারীদের চাপ
আজকের সমাজে নারীদের সৌন্দর্য নিয়ে প্রচুর চাপ রয়েছে। অনেকেই নিজেদের শরীরের সৌন্দর্য নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, কারণ সমাজের সৌন্দর্য ধারণা অনেক সময় তাদের প্রাকৃতিক রূপকে গ্রহণ করতে বাধা দেয়। নারীদের শারীরিক সৌন্দর্য প্রায়শই তাদের মূল্যায়নের একমাত্র মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়, যা কখনো কখনো মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।
নোরা ফাতেহির মতো ফিগার চাওয়ার চাপ
সম্প্রতি গাজিয়াবাদে একটি মেয়েটি থানায় অভিযোগ করেছে যে তার স্বামী তাকে নোরা ফাতেহির মতো ফিগার বানানোর জন্য শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করেছে। তাকে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ব্যায়াম করতে বাধ্য করা হত এবং না করলে খাবারও দেয়া হতো না। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে নারীদের শরীরের প্রতি এই নির্দিষ্ট সৌন্দর্য মানদণ্ড কেবল তাদের ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যকে খর্ব করে না, বরং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলে।
নারীদের সৌন্দর্য: পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত
আজকাল, বিউটি ইন্ডাস্ট্রি একটি বিশাল বাজার তৈরি করেছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এই ইন্ডাস্ট্রি নারীদের শারীরিক সৌন্দর্যকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করছে এবং তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে উপেক্ষা করে কৃত্রিম সৌন্দর্যকে প্রচার করছে। এর ফলে, নারীরা এমন কিছু শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য নিজেদেরকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে পরিশ্রমী করে তোলে, যা অনেক সময় তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সৌন্দর্য মানদণ্ডের বৈষম্য
সমাজে সৌন্দর্যের আদর্শ নির্ধারণে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সময় প্রাধান্য পায়। নারী যদি তাদের শরীরের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে, তা হলে সামাজিকভাবে তাদের অপমান করা হয়। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় ৭৭% ভারতীয় নারী নিজেদের শরীরকে ঘৃণা করে। এই সামাজিক কাঠামো নারীদের মানসিক অবস্থা এবং আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বডি পজিটিভিটি: সামাজিক পরিবর্তন
বর্তমানে ‘প্লাস সাইজ’ শরীর এবং বডি পজিটিভিটির প্রচার বেড়েছে, কিন্তু তারপরেও সৌন্দর্যের আদর্শের পরিবর্তন পুরোপুরি ঘটেনি। এই একাধিকার সৌন্দর্য ধারণাগুলো এখনও সমাজে গভীরভাবে প্রতিস্থাপিত, এবং সেই কারণে নারীদের মাঝে নিজেদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভালোবাসা ও গ্রহণের পরিবর্তে কৃত্রিম সৌন্দর্য অর্জনের প্রবণতা বেশি।
বডি পজিটিভিটির জন্য সমর্থন
অবশ্যই, সামাজিক মিডিয়া এবং চলচ্চিত্রে অনেক সময় ‘মোটা’ নারীদের বডি পজিটিভিটি চিহ্নিত করা হয়, কিন্তু বাস্তবে তাদেরকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয় না। নারীদের সৌন্দর্য নিয়ে এমন কঠোর মানদণ্ড তাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর পরিবর্তে, নারীকে শুধু তার সৌন্দর্য নয়, তার ক্ষমতা, দক্ষতা এবং মানবিক গুণাবলীর জন্যও মূল্যায়ন করা উচিত।
পরিবর্তনের জন্য আহ্বান
এই পরিবর্তন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যার কথা নয়, এটি একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। আমাদের সৌন্দর্যের প্রচলিত ধারণাগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নারীদের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন করতে হবে। সৌন্দর্যকে কেবল বাহ্যিক নয়, বরং অন্তর্নিহিত গুণাবলী এবং আত্মবিশ্বাসেরও ভিত্তি হিসেবে দেখার সময় এসেছে।
